মানুষের আনন্দে সম্পৃক্ত হওয়ার মানবিক জয়গান

বন্ধুসভা জাতীয় পরিচালনা পর্ষদের উদ্যোগে সহমর্মিতার ঈদ, রাজধানীর মিরপুর কালশীর বাউনিয়াবাঁধ সি ব্লকের আরবান স্কুলের মাঠ (প্রথম ধাপ)
ছবি: দীপু মালাকার

ঘড়ির কাঁটায় তখন বেলা সাড়ে তিনটা। রাজধানীর মিরপুর কালশীর বাউনিয়াবাঁধ সি ব্লকের আরবান স্কুলের মাঠে সারিবদ্ধভাবে সাজানো চেয়ারে বসে আছেন অসংখ্য শিশু-কিশোর ও তাদের অভিভাবকেরা। সবার মধ্যে উচ্ছ্বাস। বন্ধুসভা জাতীয় পরিচালনা পর্ষদের পক্ষ থেকে ঈদ উপহার পেয়ে কিছুক্ষণের মধ্যে সেই উচ্ছ্বাস দ্বিগুণ হলো।

ছয় বছর বয়সী ফাতেমা এসেছিল মায়ের সঙ্গে। স্থানীয় একটি স্কুলে প্রথম শ্রেণিতে পড়ে। মা অন্যের বাসাবাড়িতে কাজ করেন। নতুন জামা দিয়ে কী করবে, জানতে চাইলে ফাতেমা মুচকি হাসি দিয়ে অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে বলে, ‘ঈদের দিন পরব।’
আরেক শিশু ইতুর বয়স পাঁচ বছর। সে তার ফুফুর সঙ্গে এসেছে। তাকেও নতুন জামা দেওয়া হয়েছে।

হাসিমাখা মুখগুলোতে নতুন জামার উচ্ছ্বাস
ছবি: দীপু মালাকার

৪, ৫ ও ৬ এপ্রিল মোট তিন ধাপে ফাতেমা ও ইতুর মতো এমন ৩৫৫ শিশুকে রঙিন জামা ও ২৩০টি পরিবারকে ঈদের খাদ্যসামগ্রী উপহার দিয়েছে বন্ধুসভা জাতীয় পরিচালনা পর্ষদ। এর মধ্যে প্রথম ধাপে ৪ এপ্রিল কালশীতে ১৮৫ শিশুকে নতুন জামা ও তাদের পরিবারকে ঈদের খাদ্যসামগ্রী উপহার দেওয়া হয়। এ সময় শিশু ও অভিভাবকদের উদ্দেশে জাতীয় পর্ষদের সভাপতি জাফর সাদিক বলেন, ‘এটা আপনাদের জন্য প্রথম আলো বন্ধুসভার ঈদ উপহার। সারা দেশে বন্ধুসভার বন্ধুরা নিজেদের খরচের একটা অংশ বাঁচিয়ে প্রতিবেশীর হক আদায় করছে। আপনারা আমাদের প্রতিবেশী। তাই আজ ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে এসেছি। আপনারা বন্ধুদের জন্য দোয়া করবেন।’ মায়েদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘সন্তানকে মাদক থেকে দূরে রাখবেন।’

জাতীয় পর্ষদের সহসভাপতি রুবাইয়াত সাইমুম চৌধুরী বলেন, ‘সবাই মিলে আনন্দ না করলে সত্যিকারের ঈদ উদ্‌যাপন করা হয় না। তাই আপনাদের মাঝে এসেছি আনন্দ ভাগ করে নিতে।’

বন্ধুসভা জাতীয় পরিচালনা পর্ষদের উদ্যোগে সহমর্মিতার ঈদ, মোহাম্মদপুরের জহুরী মহল্লা (দ্বিতীয় ধাপ)
ছবি: বন্ধুসভা

এদিন আরও উপস্থিত ছিলেন জাতীয় পর্ষদের সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ হোসেন মল্লিক, বইমেলা ও ম্যাগাজিন সম্পাদক খায়রুন্নাহার খেয়া, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক শাকিব হাসান, ঢাকা মহানগর বন্ধুসভার সহসভাপতি মাহমুদা মুহসিনা বুশরা, মুক্তিযুদ্ধ ও গবেষণা সম্পাদক ইউসুফ সর্দার, ম্যাগাজিন সম্পাদক আশফাকুর রহমান।

ফরহাদ হোসেন মল্লিক জানান, জাতীয় পর্ষদের উপদেষ্টা, সদস্য ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের সহযোগিতায় এ কার্যক্রম হয়েছে। এর মধ্যে একজন শুভাকাঙ্ক্ষী একাই এক লাখ টাকা সহায়তা করেন। এ ছাড়া বন্ধুসভার বন্ধুরা সারা দেশে নিজেদের অর্থায়নে এ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে।

ঈদের নতুন জামা দেখাচ্ছে শিশুরা
ছবি: মাহবুব পারভেজ

দ্বিতীয় ধাপে ৫ এপ্রিল মোহাম্মদপুরের জহুরী মহল্লায় ৭০ শিশুকে নতুন জামা ও তাদের পরিবারের জন্য খাদ্যসামগ্রী উপহার দেওয়া হয়। এদিন উপস্থিত ছিলেন জাতীয় পর্ষদের সহসভাপতি মাহবুব পারভেজ, দপ্তর সম্পাদক তৌহিদ ইমাম, ঢাকা মহানগর বন্ধুসভার সহসভাপতি মাহমুদা মুহসিনা বুশরা ও বন্ধু রবিউল ইসলামসহ অন্যরা।

শিশুদের উচ্ছ্বাস ও হাসিমাখা মুখ দেখে জাতীয় পর্ষদের সহসভাপতি মাহবুব পারভেজ বলেন, ‘শিশুদের এই হাসি দেখার জন্যই আমাদের এত চেষ্টা। একটাই চাওয়া—ঈদের দিন তারা নতুন পোশাক পরবে, ভালোমন্দ খাবে।’

রঙিন জামা হাতে পেয়ে শিশুদের মুখগুলো খুশিতে চকচক করছিল। ঢাকা মহানগর বন্ধুসভার সহসভাপতি মাহমুদা মুহসিনা বুশরার কাছে আনন্দ হাসিমাখা মুখগুলো যেন একটি করে আলো। তিনি বলেন, ‘ওদের হইচই দেখে মনে হচ্ছিল, এটাই ঈদের খুশি আমার। ভালো লাগা, আনন্দ কাজ করছে। ভীষণ একটা আত্মতৃপ্তি কাজ করছে।’

বন্ধুসভা জাতীয় পরিচালনা পর্ষদের উদ্যোগে সহমর্মিতার ঈদ, রাজধানীর যাত্রাবাড়ির ধলপুর (তৃতীয় ধাপ)
ছবি: আলাদিন আসাদ

তৃতীয় ও শেষ ধাপে ৬ এপ্রিল রাজধানীর যাত্রাবাড়ির ধলপুরে ১০০ শিশুকে নতুন জামা উপহার দেওয়া হয়। এদিন উপস্থিত থেকে বাচ্চাদের সঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি করেছেন জাতীয় পর্ষদের সহসভাপতি সোলায়মান কবীর, মোহাম্মদ আলী ফিরোজ, দুর্যোগ ও ত্রাণ সম্পাদক সাইমন চৌধুরী, কার্যনির্বাহী সদস্য আলাদিন আসাদ ও ঢাকা মহানগর বন্ধুসভার সভাপতি সাইদুল হাসান।

জাতীয় পরিচালনা পর্ষদসহ পুরো দেশে ‘সহমর্মিতার ঈদ’ কর্মসূচির সমন্বয় করছেন মোহাম্মদ আলী ফিরোজ। সহমর্মিতার ঈদ কথাটির মধ্যেই আলাদা একটি ভালো লাগার আবহ আছে জানিয়ে তিনি বলেন, সারা দেশের বন্ধুসভাগুলো পুরো রোজার মাস ধরে নিজেদের এবং অন্যদের থেকে সহযোগিতা সংগ্রহ করে, নতুন পোশাক ও পরিবারগুলোর জন্য খাদ্যসামগ্রী কিনেছে। তারপর সেগুলো বিতরণ করে। বন্ধুদের এই প্রচেষ্টায় কিছু মানুষের আনন্দে সম্পৃক্ত হওয়ার যে মানবিক জয়গান, এই ভালোলাগা চলতে থাকুক।