স্কুলশিক্ষার্থীদের নিয়ে চট্টগ্রাম বন্ধুসভার পাঠচক্রের আসর

টাইগারপাস বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয়ের গ্যালারি কক্ষে পাঠচক্র শেষে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে চট্টগ্রাম বন্ধুসভার বন্ধুরাছবি: বন্ধুসভা

আশির দশকে রচিত নন্দিত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের বিখ্যাত উপন্যাস ‘জীবনকৃষ্ণ মেমোরিয়াল হাইস্কুল’। অজপাড়া গাঁয়ের একটি বিদ্যালয়কে কেন্দ্র করে লেখা এই উপন্যাসটিতে ফুটে ওঠে শিক্ষক–শিক্ষার্থীদের সুন্দর সম্পর্ক, সেই সময়ের দুর্বল শিক্ষাব্যবস্থা, সমাজের বিভিন্ন প্রতিচ্ছবি ও মানবিক কিছু দিক।

চট্টগ্রামের টাইগারপাস বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয়ের গ্যালারি কক্ষে শিক্ষার্থীদের নিয়ে পাঠচক্রের আসর করে চট্টগ্রাম বন্ধুসভা। ১৫ জুলাই বিকেলে এটি অনুষ্ঠিত হয়। এটি চট্টগ্রাম বন্ধুসভার ‘হিরণ্ময় কথকতা’ সিরিজ পাঠচক্রের সপ্তম আসর।

পাঠচক্রে বইটি নিয়ে আলোচনা করেন চট্টগ্রাম বন্ধুসভার সাধারণ সম্পাদক নুরুজ্জামান খান। তিনি টাইগারপাস বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী। নুরুজ্জামান খান বলেন, ‘স্কুলজীবনে একসময় খুব বই পড়তাম। কর্মজীবনে আসার পর বই পড়ার তেমন সুযোগ হয়ে উঠত না। তবে বন্ধুসভায় যুক্ত হওয়ার পর নিয়মিত পাঠচক্রের মাধ্যমে এখন সুযোগ পেলেই বই পড়া হয়।’

পাঠচক্রে আলোচনা
ছবি: বন্ধুসভা

উপন্যাসের কাহিনি বর্ণনায় নুরুজ্জামান খান বলেন, বইয়ের চরিত্র জীবনকৃষ্ণ বাবু তাঁর উপার্জনের বড় অংশ জনকল্যাণে ব্যয় করেছেন। তাঁর প্রতিষ্ঠিত ‘জীবনকৃষ্ণ মেমোরিয়াল হাইস্কুল’ একসময় এলাকার গর্ব ছিল, যদিও বর্তমানে এটি নানা সংকটে টিকে আছে। দীর্ঘদিনের হেডমাস্টার ফজলুল করিম সাহেব স্কুলকেন্দ্রিক জীবনযাপন করতেন। মানে, স্কুলের প্রত্যেক ছাত্রের নাম, মানসিকতা ও যোগ্যতা তাঁর নখদর্পণে। তিনি একজন নীতিবান মানুষও বটে। একদিন ঢাকায় গিয়ে তাঁর এক প্রাক্তন ছাত্র, যিনি পেশায় একজন শিক্ষা অধিদপ্তরের যুগ্ম সচিব ছিলেন। তাঁর মাধ্যমে তিনি সাত লাখ টাকার সরকারি অনুদান পান। সেই অনুদানটি হাতে পেয়ে তিনি স্কুলের উন্নয়নের জন্য নানা পরিকল্পনা করেন। কিন্তু এরই মধ্যে স্থানীয় মন্ত্রী নিজের মায়ের নামে নতুন একটি আধুনিক স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। যার নাম রাখা হয়, ‘নীলগঞ্জ হাইস্কুল’। এই স্কুলে অধিক সুবিধা থাকায় ছাত্রছাত্রী ও কিছু শিক্ষক চলে যান।

এরপর পরিস্থিতি আরও জটিল হতে থাকে, যখন শিক্ষার্থী কম থাকায় আগের সরকারি অনুদান বাতিল হয়। তখন হতাশ না হয়ে হেডমাস্টার ও কয়েকজন নিবেদিত শিক্ষক মিলে এসএসসি পরীক্ষার্থীদের জন্য কোচিং চালু করেন। শিক্ষকেরা সারা দিন পালাক্রমে পড়াতে শুরু করেন। পরবর্তী সময়ে পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণার দিন দেখা যায়, স্কুলের এক ছাত্র বদরুল সারা দেশে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেছে। তার এই সাফল্যে নতুন করে আশার আলো খুঁজে পায় জীবনকৃষ্ণ মেমোরিয়াল হাইস্কুল।

পাঠচক্র শেষে শিক্ষার্থীদের মধ্যে কিশোর আলো ও চকলেট উপহার দেওয়া হয়
ছবি: বন্ধুসভা

টাইগারপাস বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক মো. আবদুস সবুর বলেন, ‘প্রথম আলো বন্ধুসভার প্রায় কার্যক্রম আমাকে বেশ মুগ্ধ করে। বই পড়ার পাশাপাশি পাঠচক্রের মাধ্যমে আমাদের শিক্ষার্থীরা নতুন কিছু জানবে ও শিখবে, এটাই প্রত্যাশা। প্রথম আলো বন্ধুসভাকে ধন্যবাদ।’

বিদ্যালয়টির ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক তাজদীদ মামুন প্রাতিষ্ঠানিক কাজে স্কুলের বাইরে থাকায় মুঠোফোনে তিনি বলেন, ‘এ ধরনের যেকোনো শিক্ষামূলক কাজে চট্টগ্রাম বন্ধুসভার জন্য বিদ্যালয় সব সময় উন্মুক্ত থাকবে।’

পাঠচক্র সঞ্চালনায় ছিলেন পাঠাগার ও পাঠচক্র সম্পাদক কামরান চৌধুরী। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন বইমেলা সম্পাদক শান্ত বড়ুয়া, বন্ধু তোফাজ্জল হোসাইন, অনামিকা দাশ, দেবমিতা নন্দী প্রজ্ঞা, শাহী মারঝোবান ও মাহফুজ রহমান। পাঠচক্র শেষে উপস্থিত শিক্ষার্থীরা বইটি সম্পর্কে তাদের অনুভূতি প্রকাশ করে। শেষে শিক্ষার্থীদের মধ্যে কিশোর আলো ও চকলেট উপহার দেওয়া হয়।

পাঠাগার ও পাঠচক্র সম্পাদক, চট্টগ্রাম বন্ধুসভা