শেষ হলো উচ্ছ্বাস-জাগানিয়া ভৈরব বন্ধুসভার বিতর্ক প্রতিযোগিতা

বিতর্ক প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের সঙ্গে ভৈরব বন্ধুসভার বন্ধুরা
ছবি: নাহিদ হোসাইন

বিতর্কের সঙ্গে ভৈরব বন্ধুসভার উচ্ছ্বাস জাগানিয়া সম্পর্কের যাত্রা গত বছর থেকে। ওই বছর স্কুল ও কলেজপর্যায়ে হওয়া প্রতিযোগিতাটি অনলাইন ও অফলাইন, উভয় স্তরে রীতিমতো ঝড় তোলে। এক মাসব্যাপী চলা প্রতিযোগিতার ইতিবাচক প্রভাব ছিল সর্বত্র। সেই থেকে বিতর্কটিকে বছরের নিয়মিত আয়োজনের অংশ বানিয়ে নেয় ভৈরব সভা। এবার ছিল দ্বিতীয় আয়োজন। দ্বিতীয় বছরে এসে কলেবর আরও বৃদ্ধি পায়। সেটি অংশগ্রহণের দিক থেকে। এবার অংশগ্রহণ করা ১৮টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে ছিল ১২টি স্কুল ও ৬টি কলেজ। এর মধ্যে ভৈরব ছাড়াও জেলা শহরসহ আশপাশের উপজেলা থেকে অংশ নেয় ৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। বিশেষ করে ভৈরবের বাইরে থেকে আসা কিশোরগঞ্জ সরকারি বালক উচ্চবিদ্যালয়, আফতাব উদ্দিন স্কুল অ্যান্ড কলেজের স্কুল ও কলেজ শাখা, দিলালপুর আ. করিম হাইস্কুলের বিতার্কিক ও শিক্ষকদের প্রাণবন্ত উপস্থিতি বিতর্ককে ভিন্নমাত্রা দেয়।

শুরুর আগ থেকে ভৈরব সভার এই বিতর্কের প্রাণশক্তি জাগিয়ে তোলে উপজেলা প্রশাসন। বিশেষ করে ইউ এন ও সাদিকুর রহমানের সব ধরনের প্রত্যক্ষ সহযোগিতা কর্মীদের উচ্ছ্বাস ও সাহসের প্রধান উৎস হয়ে ওঠে। মূলত উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতার ওপর ভর করে বিতর্কটি ফাইনাল পর্যন্ত সফলভাবে শেষ হয়।

যুক্তি উপস্থাপন করছেন পক্ষ দলের এক বিতার্কিক
ছবি: নাহিদ হোসাইন

চূড়ান্ত পর্বে কলেজপর্যায়ে অংশ নেয় সরকারি হাজী আসমত কলেজ ও রফিকুল ইসলাম মহিলা কলেজ। চ্যাম্পিয়ন হয় রফিকুল ইসলাম মহিলা কলেজ। গত বছরও চ্যাম্পিয়ন খেতাবটি ছিল এই কলেজেরই। স্কুলপর্যায়ে চ্যাম্পিয়ন হয় জেলার বাজিতপুর উপজেলা থেকে আসা আফতাব উদ্দিন স্কুল অ্যান্ড কলেজ। রানার্সআপ বাংলাদেশ রেলওয়ে উচ্চবিদ্যালয়, ভৈরব।

গত ৩০ সেপ্টেম্বর প্রতিযোগিতাটি শুরু হয়। চূড়ান্ত পর্বটি গড়ায় দুই মাস পাঁচ দিন পর ৫ ডিসেম্বর সন্ধ্যায়। সেদিন বঙ্গবন্ধু হলরুমটি বর্ণিল রূপ পায়। শুরুর আগ থেকে হলরুমের দর্শকসারির সব কটি আসন পূর্ণ হয়ে যায়। বিজয়ীদের হাতে ক্রেস্ট তুলে দেন ইউ এন ও সাদিকুর রহমান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন ভৈরব প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক এস এম বাকী বিল্লাহ, রফিকুল ইসলাম মহিলা কলেজের সহকারী অধ্যাপক মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ, ভৈরব বইমেলা পরিষদের সভাপতি আতিক আহমেদ, নাট্য সংগঠক সাগর রহমান, উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা জলিবদন তৈয়্যবা, নিরাপদ সড়ক চাই ভৈরব শাখার সাধারণ সম্পাদক আলাল উদ্দিন প্রমুখ।

চ্যাম্পিয়ন ও রানার্সআপ পুরস্কার ছাড়াও এবার শুরু থেকে ফাইনাল পর্ব পর্যন্ত সব কটি প্রতিযোগিতার শ্রেষ্ঠ বক্তাদের সম্মাননা স্মারক দেওয়া হয়। অংশগ্রহণকারী ১৮টি প্রতিষ্ঠানের ৬৪ জন তার্কিককে দেওয়া হয় অভিনন্দন সনদ। ফাইনালে স্কুলপর্যায়ে শ্রেষ্ঠ বক্তা হয় আফতাব উদ্দিন স্কুল অ্যান্ড কলেজের দলনেতা তাফাননুম ইসলাম। তার ভাষ্য, বন্ধুসভার প্রতি আস্থা ছিল এখন আরও বেড়েছে। প্রথম দিন থেকে শেষ দিন পর্যন্ত দারুণ প্রাণবন্ত ছিল সবকিছু।’

পুরস্কার ও সনদ হাতে বিতর্ক প্রতিযোগিতায় বিজয়ীরা
ছবি: রাহিম

রফিকুল ইসলাম মহিলা কলেজের দলনেতা লামিয়া আক্তার ফাইনালে শ্রেষ্ঠ বক্তা হন। তাঁর কথা থেকে জানা গেল, বিতর্কশিল্পটি এখন আর তেমন চর্চার মধ্যে নেই। বিতর্কের জন্য সময় এখন বেশ বৈরী। আর এই পরিবেশে ভৈরব বন্ধুসভার সুশৃঙ্খল এই আয়োজন বিতর্কশিল্পকে অনেক দূর নিয়ে যেতে সহায়তা করবে।

ইউএনও সাদিকুর রহমানের কথা থেকে উঠে এল, সমাজে নানা রকমের তর্কের মধ্যে বিতর্ক হলো তর্কের শৈল্পিক রূপ। এই তর্ক অন্যের যুক্তির প্রতি শ্রদ্ধা বাড়ায়। যাঁরা বিতর্ক করেন, তাঁরা মন্দ কাজ করতে পারেন না। সর্বত্র বিতর্কচর্চা বাড়ানোর প্রতি জোর দেন তিনি।

ভৈরব বন্ধুসভার সভাপতি সুমাইয়া হামিদ ও সাধারণ সম্পাদক ছিদরাতুল রশিদ। প্রতিযোগিতাটিকে শেষ পর্যন্ত সফল রূপ পাইয়ে দেওয়ার ব্যাপারে তাঁদের শ্রম ছিল ক্লান্তিহীন। তাঁদের কাছ থেকে জানা গেল, এবার প্রতিযোগিতা শুরুর আগে সব তার্কিককে নিয়ে এক দিনের কর্মশালার আয়োজন করা হয়। আয়োজনটি নন্দিত হওয়ার পেছনে উদ্যোগটি বেশ ইতিবাচক ভূমিকা রাখে।

পুরো আয়োজনে বিভিন্ন পর্বে মোট ৫৪ জন বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন ১৮ জন। ভৈরব বন্ধুসভার ফেসবুক পেজ থেকে প্রতিটি পর্ব লাইভ সম্প্রচার হয়। চূড়ান্ত পর্বটি হয় বন্ধুসভার জাতীয় পেজ থেকে।