১৬ ডিসেম্বর, বাঙালি জাতির জীবনে এক ঐতিহাসিক দিন। ১৯৭১ সালের এই দিনে দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের পর অর্জিত হয়েছিল স্বাধীনতার চূড়ান্ত বিজয়। বিজয় দিবস কেবল একটি তারিখ নয়, এটি আমাদের আত্মত্যাগ, সাহস এবং গৌরবের প্রতীক। মুক্তিযুদ্ধের বীর সেনানী, যাঁদের আত্মত্যাগে লাল-সবুজের পতাকা পৃথিবীর বুকে স্থান করে নিয়েছে, তাঁদের স্মরণে ‘বিজয়ের বাঁশি’ শিরোনামে অনুষ্ঠান করেছে রাজশাহী বন্ধুসভা। ১৬ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় প্রথম আলোর রাজশাহী অফিসে এটি অনুষ্ঠিত হয়।
প্রথম আলো রাজশাহীর নিজস্ব প্রতিবেদক আবুল কালাম মুহম্মদ আজাদের সঞ্চালনায় স্বাগত বক্তব্য দেন রাজশাহী আঞ্চলিক শিক্ষা অফিসের সহকারী পরিচালক (মাউশি) আলমাস উদ্দীন। তিনি বলেন, ‘অনেক ত্যাগ–তিতিক্ষার বিনিময়ে আমরা বিজয় পেয়েছি। এই বিজয় অর্জনে যাঁরা শহীদ হয়েছেন, তাঁদের আত্মার শান্তি কামনা করি। বিজয়ের সার্থকতা যেন বজায় থাকে, সে জন্য নতুন প্রজন্ম ২০২৪ সালে এসে আবার আন্দোলন করেছে। আমরা চাই, বিজয়ের সত্যিকারের যে চাওয়া ছিল, সত্যিকারের যে আকাঙ্ক্ষা ছিল, মানুষের সে আকাঙ্ক্ষাগুলো যেন পূর্ণ হয়।’
অনুষ্ঠানে ‘বিজয়ের বাঁশির’ সুর পরিবেশন করেন বাংলাদেশ বেতার ও টেলিভিশন, রাজশাহীর বাঁশি (উচ্চাঙ্গসংগীত) শিল্পী অনিমেষ মুকুটমণি; তবলা পরিবেশন করেন বাংলাদেশ বেতারের অমিতাভ চ্যাটার্জি। প্রথমেই তাঁরা পরিবেশন করেন রাগের ইমন, আভোগী এবং কলাবতী সুর।
রাগ পরিবেশন শেষে রূপালী ব্যাংকের রুয়েট শাখার ব্যবস্থাপক সেতাউর রহমান খান রাজশাহী বন্ধুসভাকে এমন আয়োজনের জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ‘বিজয় দিবস আমাদের আত্মপরিচয়ের প্রতীক। আজকের এই আয়োজন আমাকে নতুনভাবে অনুপ্রাণিত করেছে। এইভাবে বাঁশি বাজিয়েও যে উচ্চাঙ্গসংগীত প্রকাশ করা যায়, তা এত দিন জানতাম না। বাঁশির সুরের মধ্যে অনুভব করেছি আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও গৌরব। তরুণদের উচিত এই চেতনাকে ধারণ করে একটি সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলা। যেখানে সবার জন্য সমান অধিকার নিশ্চিত করা হবে।’
লাখো মানুষের রক্তের বিনিময়ে বিজয় অর্জন হয়েছে। সবাইকে এই দেশকে ভালোবেসে তাঁদের আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে হবে।বাংলাদেশ বেতার, রাজশাহীর সহকারী পরিচালক (অনুষ্ঠান) তনুশ্রী সান্যাল
বাংলাদেশ বেতার, রাজশাহীর সহকারী পরিচালক (অনুষ্ঠান) তনুশ্রী সান্যাল বলেন, ‘১৬ ডিসেম্বর বিজয়ের দিন, উৎসবের দিন। আজ এখানে সুন্দর অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। কিন্তু এই বিজয়ের পেছনে অনেক ত্যাগ–তিতিক্ষা রয়েছে। লাখো মানুষের রক্তের বিনিময়ে বিজয় অর্জন হয়েছে। সবাইকে এই দেশকে ভালোবেসে তাঁদের আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে হবে। তাঁরা যে কারণে দেশের জন্য ত্যাগ স্বীকার করেছেন, সেই লক্ষ্য যেন পূরণ হয়। তবেই বিজয়ের সার্থকতা বজায় থাকবে।’
রাজশাহী মেডিকেল কলেজের চিকিৎসক নিবেদিতা চ্যাটার্জী বলেন, ‘বিজয় দিবস শুধু আমাদের ইতিহাসের বিজয় নয়, এটি আমাদের দেশের মানুষের সংগ্রাম এবং স্বপ্নেরও বিজয়। আমরা যাঁরা স্বাস্থ্য খাতে কাজ করি, আমাদের দায়িত্ব আরও বৃদ্ধি পেয়েছে স্বাধীন দেশে মানুষের সুস্থতা নিশ্চিত করার জন্য। মুক্তিযুদ্ধের যে সাহসিকতা ও ত্যাগ দেখেছি, সেটি আমাদের প্রেরণা হিসেবে কাজ করে। আমরা যদি সঠিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে পারি, তাহলে সত্যিকার অর্থে দেশের মানুষের জন্য আরও বড় অবদান রাখতে পারব। আসুন, সবাই একযোগে কাজ করি একটি সুস্থ, নিরাপদ এবং সমৃদ্ধ দেশ গড়ে তোলার জন্য।’
বক্তব্য শেষে আবারও বাঁশির সুরে কীর্তন এবং পাহাড়ি ধুন পরিবেশন করেন অনিমেষ মুকুটমণি। অতিথিদের অনুরোধে তিনি আরও বেশ কয়েকটি সুর পরিবেশন করেন। অনিমেষ মুকুটমণি বলেন, ‘বাঁশি বাজাতে অনেক ভালো লাগে। একসময় মানুষের বাঁশি বাজানো দেখতাম। তখন শুধু চিন্তা করতাম, সে কীভাবে বাজাচ্ছে আর টানা কত সময় বাজানো যায়। সেই চিন্তা থেকে বাঁশি বাজানো শুরু করা। শুরুতে বাজানো শিখি। তার পর থেকে নিয়মিত অনুশীলন করতে করতে এই পর্যায়ে এসেছি।’
প্রথম আলো বন্ধুসভাকে ধন্যবাদ জানিয়ে অনিমেষ মুকুটমণি আরও বলেন, ‘আজকের এই বিজয় দিবসের আয়োজনের অংশ হতে পেরে গর্বিত। বাঁশির সুরের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের গৌরবময় ইতিহাস এবং বিজয়ের আনন্দ প্রকাশ করার চেষ্টা করেছি। দিনটি আমাদের মনে করিয়ে দেয়, স্বাধীনতার জন্য কত ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে। বন্ধুসভার কাজ এবং উদ্যোগ সত্যিই প্রশংসনীয়।’
বন্ধুরা বলেন, ‘বন্ধুসভার লক্ষ্য তরুণদের মধ্যে সমাজসেবামূলক কাজের আগ্রহ সৃষ্টি করা এবং দেশের প্রতি দায়বদ্ধতা তৈরি করা। সেই থেকেই আজকের এই আয়োজন। আমরা সবাই মিলে একসঙ্গে কাজ করতে এবং একটি সমৃদ্ধ জাতি গড়ে তুলতে চাই।’
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন পুঠিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক রুবেল আহমেদ, রাজশাহী ইসলামিয়া কলেজের বাংলা বিভাগের প্রভাষক নাহাফুজা রনি, প্রথম আলোর রাজশাহী প্রতিনিধি শফিকুল ইসলাম, রাজশাহী আলোর পাঠশালার প্রধান শিক্ষক রেজিনা খাতুন, সহকারী শিক্ষক খাদিজাতুল কুবরা, মো. সারফরাদ, শুভ হাসান, নাসরিন খাতুন, রহমত আলী, রাজশাহী বন্ধুসভার উপদেষ্টা ফারুক হোসেন, সভাপতি মাসুদ রানা, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তাহমিনা আক্তার, দপ্তর সম্পাদক সুশীল চন্দ্র পাল, দুর্যোগ ও ত্রাণ সম্পাদক সুলতান শেখ, কার্যনির্বাহী সদস্য শাহাদাত হোসেনসহ অন্য বন্ধুরা।
সাধারণ সম্পাদক, রাজশাহী বন্ধুসভা