বিদ্যালয়ের মাঠ থেকে জাতীয় দলে

নারী খেলোয়াড়দের ফুল দিয়ে সম্মাননা জানান ঠাকুরগাঁও বন্ধুসভার বন্ধুরাছবি: বন্ধুসভা

ঠাকুরগাঁও শহর থেকে সাত কিলোমিটার দূরের সালন্দর উচ্চবিদ্যালয়। এই বিদ্যালয়ের ১৫ ছাত্রী বিভিন্ন খেলায় অবদান রেখে চলেছে। কেউ কেউ পড়ছেন বিশ্ববিদ্যালয়ে। তাঁরা সবাই দরিদ্র পরিবারের সন্তান। সমাজের কটু কথা আর আর্থিক সংকট মোকাবিলা করে হকি, রাগবি, বাস্কেটবল, আবার কেউ আর্চারিতে বাংলাদেশের জার্সি গায়ে নিয়ে জাতীয় পর্যায়ে খেলছেন।

অদম্য এসব নারী খেলোয়াড়কে ফুল দিয়ে সম্মাননা জানানোর মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক নারী দিবস উদ্‌যাপন করেছে ঠাকুরগাঁও বন্ধুসভা। ৮ মার্চ এ কর্মসূচি পালিত হয়। এ সময় অদম্য নারীরা তাঁদের জীবনের সংগ্রামের কথা ও সামাজিক প্রতিবন্ধকতা ও অর্জনের গল্প তুলে ধরেন।

সালন্দর উচ্চবিদ্যালয়ে লেখাপড়ার পাশাপাশি খেলাধুলা করে জাতীয় নারী হকি দলে সুযোগ পেয়েছেন ছয়জন। তাঁরা হলেন সানজিদা আক্তার, রানী আক্তার, মোকছেদা আক্তার, তাসমিম আক্তার, জাকিয়া আফরোজ ও সিমু আক্তার। জাতীয় নারী বাস্কেটবল দলের খেলোয়াড় হলেন শারমিন আক্তার ও মুসলিমা আক্তার। জাতীয় নারী রাগবি দলে আছেন রুপিয়া আক্তার ও রুবিনা আক্তার। রোলবলের (রোলার স্কেটিং, বাস্কেটবল ও হ্যান্ডবলের সমন্বয়ে একটি খেলা) জাতীয় নারী দলে আছেন সানজিদা আক্তার এবং আর্চারির জাতীয় নারী দলে রয়েছেন মনি আক্তার। খো খোর জাতীয় নারী দলে রশিদা আক্তার, লামিয়া আক্তার ও রিতু রানী সেন খেলছেন। তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ একাধিক খেলাতেও আছেন।

২০১৮ সাল পর্যন্ত সালন্দর বিদ্যালয়ে কেটেছে সানজিদা আক্তারের। বাবা অসুস্থ হয়ে পড়লে লেখাপড়া বন্ধ হতে বসে তাঁর। সে সময় ২০১৯ সালে তিনি হকি জাতীয় দলে সুযোগ পান। পাশাপাশি ২০২২ সালে খেলোয়াড় কোটায় যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিজিক্যাল এডুকেশন অ্যান্ড স্পোর্টস সায়েন্স বিষয়ে পড়ারও সুযোগ পেয়ে যান। সানজিদা এখন দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। সানজিদা আক্তার বলেন, ‘খো খো আর হকিতে বাংলাদেশের হয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে খেলেছি। এখন খেলোয়াড় কোটায় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছি। সে সময় খেলায় যুক্ত না হলে এমন সুযোগ পেতাম না।’

নারী খেলোয়াড়দের ফুল দিয়ে সম্মাননা জানান ঠাকুরগাঁও বন্ধুসভার বন্ধুরা

সালন্দর উচ্চবিদ্যালয়ের আরেক শিক্ষার্থী রাশিদা আক্তার বাংলাদেশ জাতীয় খো খো দলের খেলোয়াড়। খেলোয়াড় কোটায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পান। তিনিও এখন দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। পড়ছেন ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিষয় নিয়ে। রাশিদা বললেন, ‘মানুষের কটু কথা উপেক্ষা করে খেলাধুলার মধ্যে ছিলাম বলেই আজ আমি বাংলাদেশের হয়ে খেলতে পারছি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে পারছি।’

এ ছাড়া খো খোর জাতীয় দলের সদস্য লামিয়া আক্তারও খেলোয়াড় কোটায় পড়ছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে।

রাগবি জাতীয় নারী দলে খেলছেন রুপিয়া আক্তার। তিনিও সালন্দর উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলেন। বর্তমানে আনসারের রাগবি দলের নিয়মিত সদস্য। সেখান থেকে নিয়মিত ভাতা পান। রুপিয়া বললেন, ‘আমাদের শুরুটা সহজ ছিল না। শত বাধা উপেক্ষা করে খেলা চালিয়ে গিয়েছি। যখন দেশের জার্সি নিয়ে মাঠে নামি, তখন বুকটা গর্বে ভরে যায়।’

আরেক নারী খেলোয়াড় জাকিয়া আফরোজ বলেন, ‘বাধা পেরিয়ে এখন আমি বাংলাদেশের জাতীয় পর্যায়ে খেলছি। আগে যারা আমাদের নিয়ে নানা কথা বলত, তারাই এখন উৎসাহ দেয়। এমন উৎসাহ পেলে নারীরা আরও এগিয়ে যাবে।

ঠাকুরগাঁও বন্ধুসভার উপদেষ্টা ফেরদৌস আরা বেগম বলেন, ‘প্রত্যেক নারীর জীবন একটা সংগ্রাম। এ সংগ্রাম উপেক্ষা করে যে নিজেকে তুলে ধরতে পেরেছে, সে সফল। জীবনে বাধা আসবেই। নারীদের আপন শক্তিতে এগিয়ে যেতে হবে।’

যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রাবেয়া আপেল বলেন, ‘নারী শক্তি ও সাহসের প্রতীক।’

এ সময় উপস্থিত ছিলেন ঠাকুরগাঁও বন্ধুসভার সাধারণ সাম্পাদক সৈয়দ শিহাব, জেন্ডার ও সমতাবিষয়ক সম্পাদক জান্নাতুল ফেরদৌস, পরিবেশ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক মিথিলা আক্তার, স্বাস্থ্য ও ক্রীড়া সম্পাদক মারুফ হাসান, দপ্তর সম্পাদক রুদ্র মহন্ত, তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি সম্পাদক তপু রায়, বন্ধু মাহফুজা ফারিহা, লিপি রায়সহ অন্য বন্ধুরা।

সাধারণ সম্পাদক, ঠাকুরগাঁও বন্ধুসভা