‘এংনা আরাম হইল বা’

শীতবস্ত্র পেয়ে খুশি শীতার্তরা
ছবি: বন্ধুসভা

গায়ে পাতলা চাদর আর হাতে ব্যাগ নিয়ে এসেছেন নাসিমা বেগম (৪২)। তিনি খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে বাড়ির কাজ শেষ করে ছাত্রাবাসে রান্না করেন। কম্বল পেয়ে তিনি বলেন, ‘এই ঠান্ডায় ভোরে ওঠি মেসত রান্না করিবা যাই, পাতলা একখান চাদর গাওত দিয়া শীত যায় না। কম্বলটা পায়া মোর খুব ভালো হইল।’

১৮ জানুয়ারি সকালে দিনাজপুর সরকারি কলেজ মাঠে প্রথম আলো ট্রাস্টের উদ্যোগে এবং বন্ধুসভার বন্ধুদের সহায়তায় ভারী কুয়াশা উপেক্ষা করে শীতবস্ত্র নিতে জমায়েত হন বিভিন্ন পেশা ও বয়সের দুই শতাধিক দুস্থ নারী-পুরুষ। আগের দিন শহরের সুইহারী, কলেজ মোড়, গোসাইপুর, গোপালগঞ্জ, মির্জাপুর, লালবাগ, গোয়ালপাড়া, শেখপুরা ও নতুনপাড়া এলাকায় দুস্থ মানুষদের খুঁজে বের করেন বন্ধুরা।

কম্বল পেয়ে অনেকে বন্ধুদের দোয়া করে দেন
ছবি: বন্ধুসভা

লাঠি হাতে সুইহারী এলাকা থেকে অন্য একজনের সহায়তায় এসেছেন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী আনিস মিয়া। বয়স পঞ্চাশোর্ধ্ব। শীতবস্ত্র পেয়ে খুশি হয়ে বন্ধুদের জন্য দোয়া কামনা করে তিনি বলেন, ‘কম্বলটা পেয়ে খুব উপকৃত হলাম। এবার ঠান্ডার হাত থেকে বাঁচা যাবে।’ মির্জাপুর থেকে আসেন মেহুলা বেওয়া। কম্বল হাতে পেয়ে আবেগে কান্না থামাতে পারেননি তিনি। এক বন্ধুর কাঁধে হাত রেখে তিনি বলেন, ‘মুই খুব অসহায় বা, ব্যাটাও নাই, বাড়িঘর কিছু নাই, বেটির ঘরত থাকো। যে ঠান্ডা খাইছিনু, তোমরা বাঁচাইলেন।’

দিনাজপুর জেলা প্রতিনিধি শৈশব রাজু ও বন্ধুসভার উপদেষ্টা রেজাউল করিমের সার্বিক তত্ত্বাবধানে সবার হাতে কম্বল পৌঁছে দেন। বয়সের ভারে নুয়ে পড়া বাবু মিঞা (৮০) পৌঁছাতে পারেননি শীতবস্ত্র বিতরণস্থলে। বন্ধু সাদমান তাঁর কাছে পৌঁছে দেন প্রথম আলোর উষ্ণতা। খুশি হয়ে তিনি বলেন, ‘খুব উপকার করিলু বা, এই শীতোত কী যে কষ্ট! চাটাইয়ের ফাঁক দিয়া শু-শু করিয়া বাতাস ঢুকে। এংনা আরাম হইল বা।’

দুই শতাধিক দুস্থ নারী-পুরুষ পেয়েছেন শীতবস্ত্র
ছবি: বন্ধুসভা

সভাপতি মুনিরা শাহনাজ চৌধুরী শোনেন শীতার্ত ব্যক্তিদের শীতযাপনের গল্প। ফুলবাড়ী বাসস্ট্যান্ডে দীর্ঘদিন কলা বিক্রি করছেন ৮২ বছর বয়সী মাজেদা বেওয়া। এখনো কারও দ্বারস্থ হননি। ঠান্ডায় জবুথবু হয়ে রাস্তার ধারে কলা নিয়ে বসেন এই শীতেও। বন্ধুসভার বন্ধুরা তাঁর কাছেও পৌঁছে দেন প্রথম আলোর শীত উপহার।

সাধারণ সম্পাদক, দিনাজপুর বন্ধুসভা