একসময় জমিটা পড়ে থাকত অনাবাদি, আগাছায় ভরা। গ্রামের মানুষ পাশ কাটিয়ে যেত, কেউ তাকাতও না। খুলনা জেলার ডুমুরিয়া উপজেলার শোভনা গ্রামের এক কোণে অনকুল দেবনাথের ছোট্ট একখণ্ড জমির ইতিহাস এটি। কেউ ভাবেননি, এই জমিতেই একদিন ফুটবে নতুন আশার সবুজ। সেই পতিত জমিটাই এখন যেন নবজীবন পেয়েছে। সেখানে শাক, টমেটো, মরিচ, মুলা, বেগুনসহ নানা মৌসুমি ফসল চাষ করার জন্য বীজ ও চারা রোপণ করা হয়েছে।
এই পরিবর্তনের সূচনা করেছে খুলনা বন্ধুসভা। প্রথম আলোর ২৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ‘একটি ভালো কাজ’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে বন্ধুসভার সদস্যরা অনকুল দেবনাথের পতিত জমিটিকে রূপ দিয়েছেন একটি জৈব সবজি বাগানে। ২৪ অক্টোবর এ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হয়।
পুরো বাগান তৈরিতে ব্যবহার করা হয়েছে জৈব সার ও প্রাকৃতিক উপায়ে তৈরি বালাইনাশক। কোনো রাসায়নিক সার বা বিষাক্ত কীটনাশক ব্যবহার করা হয়নি। এতে যেমন মাটি উর্বর থাকবে, তেমনি পরিবেশও থাকবে সুরক্ষিত। এ উদ্যোগের মূল ভাবনা—সারা বছর পুষ্টি, আয় ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে টেকসই কৃষিচর্চা গড়ে তোলা।
সহসভাপতি এম এম মাসুম বিল্যাহ বলেন, ‘গ্রামীণ এলাকায় অনেক ছোট ছোট পতিত জমি অনাবাদি পড়ে থাকে। আমরা চাই, সেগুলো কাজে লাগুক—যাতে পরিবারগুলো নিজেরাই সবজি উৎপাদন করে পুষ্টি পায়, অতিরিক্ত ফলন বিক্রি করে সামান্য আয় করতে পারে, আর গ্রামজুড়ে জৈব চাষের ধারণা ছড়িয়ে পড়ে।’
এ উদ্যোগে উপস্থিত ছিলেন যুগ্ম সম্পাদক ফারজানা যুথি, সহসাংগঠনিক সম্পাদক মিতা মাহমুদ, পাঠাগার ও পাঠচক্র সম্পাদক জুঁই আক্তার, তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি সম্পাদক অনির্বাণ সরকার, সাবেক তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি সম্পাদক শাফায়েত হোসেন, দুর্যোগ ও ত্রাণ সম্পাদক ফারজানা আক্তার, বন্ধু সৌরভ ঘোষ, আভরুজ জামানসহ অনেকে।
বন্ধুরা নিজেদের হাতে মাটি তৈরি, চারা রোপণ থেকে শুরু করে অনকুল দেবনাথকে দেখিয়েছেন—কীভাবে ফসল ঘুরিয়ে চাষ করা যায়, যাতে সারা বছর উৎপাদন বজায় থাকে এবং মাটির উর্বরতা শক্তি নষ্ট না হয়।
অনকুল দেবনাথ বলেন, ‘আগে জমিটার কোনো কাজই হইত না। বন্ধুসভার ছেলেপুলে আইসা চারা লাগাইয়া দিল। এখন গাছ বড় হইবে। ঠাকুরের কৃপায় ফল ধরলেই সংসারের চাহিদা মিটাইবে, কিছু বিক্রি কইরা দুই পয়সা রুজিও হইব।’