বাঁওড়ের স্বচ্ছ জলের ওপর নৌকায় বসে পাঠের আসর

নৌকায় বসে যশোর বন্ধুসভার পাঠচক্র
ছবি: বন্ধুসভা

মধ্যবিত্ত জীবনের নারী-পুরুষের সম্পর্ক, দ্বন্দ্ব, আবেগ, ভালোবাসা ও সংঘাতের সফল চিত্রায়ণ শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের কালজয়ী উপন্যাস ‘দেবদাস’। বিশ শতকের শুরুতে বাংলার মধ্যবিত্ত শ্রেণিকে বইয়ের পাতায় হৃদয়গ্রাহী স্পর্শে মেলে ধরার সাহস দেখিয়েছেন তিনি। গ্রামীণ জীবনের সঙ্গে শহুরে জীবনের দ্বন্দ্ব, প্রথাগত সমাজের শিকড়ে বাঁধা জীবনের দ্বন্দ্ব ও আধা পুঁজিবাদী সমাজে মধ্যবিত্তের অবস্থান—এসব কিছু ছাপিয়ে নারী-পুরুষের শাশ্বত প্রেমের গল্প নিয়ে রচিত হয়েছে উপন্যাসটি।

শরতের মৃদু মেঘাচ্ছন্ন আকাশের নিচে বাঁওড়ের স্বচ্ছ জলের ওপর দুখানা নৌকা কলকল ধ্বনি তুলে ছুটে চলেছে। নৌকায় বসে আলোচনা হচ্ছে দেবদাস, পার্বতী, চন্দ্রমুখীর মতো চরিত্রদের নিয়ে। শরতে শরৎ-সাহিত্যের রসাস্বাদন করতে এমন ব্যতিক্রম আয়োজনে ৮ সেপ্টেম্বর ‘দেবদাস’ উপন্যাস নিয়ে কোটচাঁদপুর বলুহর বাঁওড়ে অনুষ্ঠিত হয় যশোর বন্ধুসভার মাসিক পাঠচক্র ও আলোচনা সভা।

ট্র্যাজেডি সব সময় মানুষের মনকে আলোড়িত করে; দেবদাসও তার ব্যতিক্রম নয়। নারী-পুরুষের প্রচলিত দ্বন্দ্ব ছাপিয়ে তাই দেবদাস হয়ে উঠেছে ব্যর্থ ভালোবাসার প্রতীক। আধুনিক বাংলা সাহিত্যের সার্থক ট্র্যাজেডি উপন্যাস ‘দেবদাস’ পেয়েছে ধ্রুপদি সাহিত্যের মর্যাদা। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের জীবন, সাহিত্য, দর্শন ও দেবদাস নিয়ে আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন যশোর সরকারি মাইকেল মধুসূদন কলেজের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক আখতার হোসেন, ইতিহাস বিভাগের সহকারী অধ্যাপক শাহ্জাহান কবীর, যশোর সরকারি মহিলা কলেজের বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোফাজ্জেল হোসেন, প্রথম আলোর প্রতিনিধি মনিরুল ইসলাম, যশোর বন্ধুসভার সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামান সাদ ও সাংগঠনিক সম্পাদক সুমন রেজা।

যশোর বন্ধুসভার বন্ধুরা
ছবি: বন্ধুসভা

আখতার হোসেন তাঁর আলোচনায় বলেন, ‘সমাজ নিরপেক্ষ হয়ে স্বাধীনভাবে উপন্যাসের চরিত্ররা আচরণ করতে না পারলেও মধ্যবিত্ত সমাজকে তুলে ধরার ক্ষেত্রে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় মুনশিয়ানা দেখিয়েছেন।’ আলোচনায় বক্তারা শরৎচন্দ্রের জীবন, সমাজ ও সাহিত্য নিয়ে বিশ্লেষণ করেন। লেখকের গ্রামীণ জীবনের অচলায়তন এবং শহরে আংশিক মুক্ত জীবনযাপনের দ্বন্দ্ব-সংঘাত, সমাজসত্তার শিকলে বাঁধা জীবনের ছবি তুলে ধরেন।

এর আগে যশোর রেলস্টেশন থেকে ট্রেনে বন্ধুরা কোটচাঁদপুর স্টেশনে পৌঁছান। সেখান থেকে ভ্যানযোগে উপস্থিত হন বলুহর বাঁওড়ে। ভ্রমণ ও সাহিত্য নিয়ে আড্ডায় পরিপূর্ণ ছিল পুরো আয়োজন। পাঠচক্রে আরও উপস্থিত ছিলেন বন্ধু সাইদুর রহমান লিটন, জাহানারা জ্যোতি, সুমাইয়া আক্তার, নুসরাত জাহান, রাইয়াদ ফেরদৌস, মুস্তাফিজুর রহমান, নাহিদ হাসান, মনিরা খাতুন, হামিদা হিমু, স্বপ্না খাতুন, নুরুন্নবী, হাবিবা খাতুন, সিনথিয়া সুমি, ফয়সাল আহমেদ ও সামিউল আলম। সঞ্চালনা করেন খন্দকার রুবাইয়া।

সাধারণ সম্পাদক, যশোর বন্ধুসভা