দেশজুড়ে বন্ধুসভার বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি

রাস্তার দুই পাশে গাছের চারা রোপণ করছেন সিলেট বন্ধুসভার বন্ধুরা
ছবি: শেখ ফয়সাল

সিলেটের তারাপুরের গোয়াবাড়ী মৃতটিলা, যেটি অনেকটা পাথরের মতোই। এমন স্থানে বৃক্ষের বেঁচে থাকা অসম্ভব বলে যখন সবাই হাল ছেড়ে দিয়েছিলেন, বন্ধুরা সেখানে রোপণ করেছেন গাছ; যা আজ সুশোভিত। সিলেট বন্ধুসভার শাহ সিকান্দার শাকিরের নেতৃত্বে হয়েছে এমন স্মরণীয় কাজ।

শুধু শাকির নন, দেশজুড়ে ছড়িয়ে থাকা বন্ধুসভার অগণিত বন্ধুর হাতের ছোঁয়ায় বাংলায় তৈরি হচ্ছে সবুজের বিছানা। প্রতিবছর জুন থেকে আগস্ট; অর্থাৎ বর্ষার মৌসুমে প্রকৃতির সতেজতার মুহূর্তে বন্ধুসভা হাতে নেয় বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি। এ কর্মসূচিতে একাত্মতা প্রকাশ করে অংশ নেন দেশ-বিদেশের লক্ষাধিক বন্ধু। বৃহৎ আয়োজনে জেলা-উপজেলা ও কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধুসভার বন্ধুরা গাছ কিনে উপযুক্ত স্থানে তা রোপণ করেন।

প্রতিবছরের মতো এবারও শুরু হয়েছে বন্ধুসভার বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি। এবারের প্রতিপাদ্য, ‘প্লাস্টিকমুক্ত পৃথিবী চাই, গাছ লাগাই, গাছ বাঁচাই’। ফলদ, বনজ ও ঔষধি গাছের চারা রোপণ করছেন বন্ধুরা। বিরত থাকছেন পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর, এমন গাছ রোপণ থেকে। এমনকি সুস্থিত না হওয়া পর্যন্ত গাছগুলোর পরিচর্যা ও রক্ষণাবেক্ষণ করা হচ্ছে।

বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে ইতিমধ্যে কর্মসূচি শেষ করেছে কয়েকটি বন্ধুসভা। ৫ জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে ৩০টি ঔষধি ও ফলদ গাছ রোপণ করে সিলেট বন্ধুসভা। পরবর্তী সময়ে ৭ জুলাই দ্বিতীয় দফায় গাছ লাগান এই বন্ধুরা। যেখানে ছিল অর্জুন, কাঠবাদাম, কাঁঠাল, হরীতকী, পেয়ারা, বহেড়াসহ মোট ১০৯টি গাছের চারা।

স্কুলশিক্ষার্থীদের মধ্যে বৃক্ষের চারা বিতরণ করে জয়পুরহাট বন্ধুসভা
ছবি: নাসিম আহমেদ

মেহেরপুর বন্ধুসভার বন্ধুরাও ইতিমধ্যে শেষ করেছেন তাঁদের কর্মসূচি। মেহেরপুর সরকারি কলেজ প্রাঙ্গণে রোপণ করেছেন বিভিন্ন ফলদ ও বনজ গাছের ৭৭টি চারা। এ ছাড়া শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসীকে উপহার দেন ৪০০টি চারা। একইভাবে বৈশ্বিক উষ্ণতা মোকাবিলা ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার উদ্দেশ্যে গাইবান্ধা বন্ধুসভা খোলাহাটি নিম্নমাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ে রোপণ করে বনজ ও ঔষধির ২৫০টি চারা।

অন্যদিকে ৯ জুলাই নার্সারি থেকে বাছাই করা সেরা গাছ রোপণ করেন হবিগঞ্জ বন্ধুসভার বন্ধুরা। শহরের বিভিন্ন খোলা স্থান ও রাস্তার দুই পাশে বাতাসের দুলুনিতে নেচে যাচ্ছে গাছগুলো। ২০ জুন থেকে ১৯ জুলাই পর্যন্ত বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি হাতে নেয় যশোর বন্ধুসভা। শুরুটা হয় যশোর মেডিকেল কলেজ ক্যাম্পাসে বৃক্ষরোপণ দিয়ে। তারা মোট ৩০০টি চারা রোপণ ও বিতরণ করে। হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধুসভার বন্ধুরাও এগিয়ে গেছেন কর্মসূচিতে। ১২ জুন দিনাজপুরের সুবরা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে করেন গাছ লাগানোর কর্মসূচি।

গাইবান্ধা বন্ধুসভার বৃক্ষরোপণ
ছবি: শহিদুল ইসলাম

জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ, পরিবেশদূষণ নিয়ন্ত্রণ ও মানোন্নয়নে নারায়ণগঞ্জ বন্ধুসভা ৯ জুন রোপণ ও বিতরণ করে বৃক্ষ। জয়পুরহাট বন্ধুসভার বন্ধুরা জেলার গোপীনাথপুর ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজি এবং গোপীনাথপুর উচ্চবিদ্যালয় প্রাঙ্গণে ফলদ ও ঔষধি গাছের ২০০টি চারা রোপণের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের উপহার দিয়েছেন গাছ। ১৫ জুলাই জেলা শহরের প্রাইমারি টিচার্স ট্রেনিং ইনস্টিটিউট চত্বরে বিভিন্ন ফলদ, ঔষধি ও ভেষজের শতাধিক চারা রোপণ এবং স্থানীয় লোকজনের মধ্যে বিতরণ করেন ফেনী বন্ধুসভার বন্ধু ও অতিথিরা। এদিকে ১৮ জুলাই নিজেরা চারা রোপণের পাশাপাশি টাঙ্গাইলের সন্তোষ রানী দিনমণি প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রায় ২৫০টি গাছের চারা বিতরণ করে মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধুসভা।

২০ জুলাই চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার বাগোয়ান ইউনিয়নের গশ্চি শিশুবাগ স্কুল কলেজ মাঠ ও এর আশপাশে এক হাজার গাছের চারা রোপণ ও বিতরণ করে রাউজান বন্ধুসভা। একই দিন সিলেটের এমসি কলেজ বন্ধুসভা ও পাবনা টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ বন্ধুসভাও গাছের চারা লাগিয়েছে। তারা কলেজ ক্যাম্পাসে বিভিন্ন ফলদ, বনজ ও ঔষধি গাছের চারা রোপণ করে।

এবার বিশ্ব পরিবেশ দিবসে রংপুর বন্ধুসভা হাতে নেয় একটি ভিন্নধর্মী কর্মসূচি, যার শিরোনাম ছিল ‘চলো গাছ চিনি’। বন্ধুরা স্কুলের কোমলমতি শিশুদের সুন্দরভাবে চিনিয়েছেন গাছ। কোন গাছের কী বৈশিষ্ট্য ও গুণাগুণ, এ সম্পর্কেও দিয়েছেন বিস্তর ধারণা। পাশাপাশি উপহার দেওয়া হয় ৩৫ প্রজাতির ২০০টি চারাগাছ। এমন সৃষ্টিশীল কর্মসূচি মনে করায়, ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে প্রকৃতি ও প্রতিবেশের সহযোগী হিসেবে তৈরি করতে চেষ্টা করছেন বন্ধুরা।

বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির নির্ধারিত সময় শেষ হলেও শেষ হয় না বন্ধুদের বৃক্ষরোপণের কাজ। কেউ কেউ নিজ উদ্যোগে সারা বছর করেন এই কাজ। শহুরে বন্ধুরা ছাদবাগান কিংবা ব্যালকনিতে বাগান করে করছেন শোভাবর্ধন।

এ বছর বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির সমন্বয়ে যুক্ত আছেন সাইমন চৌধুরী, তাহসিন মাজেদ, শাফিন উজ জামান, জাহিদ ফেরদৌস, শাহিদা আলম জ্যোতি, মুজাহিদ জামান, রেদওয়ান রেজা, শাহরিয়ার নাজিম, তৌহিদ ইমাম, সাদনান সাকিব ও রাজা মান্নান তালুকদার। প্রধান সমন্বয়কের দায়িত্বে আছেন গাজী আনিস। জাতীয় পরিচালনা পর্ষদের পক্ষ থেকে নিয়মিত মিটিং ও ফেসবুক লাইভের মাধ্যমে দেওয়া হচ্ছে বন্ধুদের নির্দেশনা। সভাপতি উত্তম রায়, সাধারণ সম্পাদক জাফর সাদিক ও নির্বাহী সভাপতি মৌসুমী মৌ সবার পক্ষ থেকে দিচ্ছেন ভিন্ন ভিন্ন বার্তা। ২৫ জুন শুরু হওয়া এ কার্যক্রম চলবে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত।

যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, বন্ধুসভা জাতীয় পরিচালনা পর্ষদ