পয়লা ফাল্গুন বসন্তের প্রথম দিন। একই সঙ্গে ১৪ ফেব্রুয়ারি ছিল বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। প্রকৃতিতে নিয়ম অনুযায়ী বসন্ত নেমে এলেও কিছু মানুষের জীবন থেকে বহু বছর আগে বসন্ত হারিয়ে গেছে; তাঁদের মনে বসন্তের আমেজ এখন আর ছোঁয়া দেয় না। পরিবারের লোকজনের অবহেলায় ভালোবাসা হারিয়ে খুঁজছেন। যাঁদের দুমুঠো ভাত হলেই কাছের মানুষের সঙ্গে মনের শান্তিতে দিন কেটে যেত, তাঁরা আপনজনের অবহেলায় বাধ্য হয়ে এসেছেন বৃদ্ধাশ্রমে।
এখানে বাস করা সবাই প্রবীণ, জীবনের শেষ প্রান্তে এসে ভালোবাসা শব্দটি হয়তো ভুলতে বসেছেন। ১৪ ফেব্রুয়ারি নোয়াখালী বন্ধুসভার বন্ধুরা ভালোবাসা খুঁজতে থাকা এসব মানুষের কাছে বসন্তের আমেজ ও ভালোবাসার উষ্ণতা ছড়িয়ে দিয়েছেন। নোয়াখালীর হরিনারায়ণপুর ইউনিয়নে অবস্থিত ওল্ড হোম ডে–কেয়ারে ৩২ জন প্রবীণের সঙ্গে দিনব্যাপী সাংস্কৃতিক ও খেলাধুলার আয়োজন নিয়ে বসন্তবরণ উৎসবে মেতে ওঠেন বন্ধুরা।
এদিন আরও আমন্ত্রণ জানানো হয় ১৪ জন সুবিধাবঞ্চিত শিশুকে। ভাষার মাস উপলক্ষে এসব সুবিধাবঞ্চিত শিশুর জন্য আয়োজন করা হয় বর্ণপরিচয় কর্মসূচি। পরে তাদের হাতে তুলে দেওয়া হয় উপহারসামগ্রী। দুপুরে সবার জন্য থাকে মধ্যাহ্নভোজের আয়োজন। বন্ধুরাও তাদের সঙ্গে পাশাপাশি বসে আহার উপভোগ করেন; যত্নসহকারে খাইয়ে দেন। জায়েদা খাতুন নামের এক বৃদ্ধ বলেন, ‘তোরা আংগোর লাই আইছস বাজান, তোরাই আংগো হোলা-ম্যাইয়া।’
মধ্যাহ্নভোজ শেষে বেলা তিনটায় প্রবীণদের জন্য আয়োজন করা হয় গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী বালিশ খেলা। বসন্তের গানের তালে চলতে থাকে খেলা। দারুণ হাড্ডাহাড্ডি লড়াই শেষে বিজয়ী হন লায়লী বেগম, তামুনা খাতুন ও মনছুরা বেগম। বিজয়ীদের হাতে তুলে দেওয়া হয় পুরস্কার।
বসন্তবরণ ও ভালোবাসা দিবসের এ ভিন্নধর্মী আয়োজনে উপস্থিত ছিলেন নোয়াখালী বন্ধুসভার উপদেষ্টা মাহফুজুর রহমান ও লায়লা পারভীন। মাহফুজুর রহমান প্রবীণদের উদ্দেশে বলেন, ‘বন্ধুসভার বন্ধুরা আপনাদের ভালোবাসা দিতে এসেছে। আপনারা তাঁদের জন্য দোয়া করবেন।’ লায়লা পারভীন বলেন, ‘আপনারা নিজেদের একা ভাববেন না, আমরাও আপনাদের পরিবার, দুঃখ-কষ্টে আপনাদের পাশে থাকব।’ নোয়াখালী বন্ধুসভার সভাপতি মাছুম বিল্লাহ বলেন, ‘আপনারা আমাদের মা-বাবার মতো। আপনাদের জন্য আমাদের ভালোবাসা সব সময় আছে।’
নোয়াখালী ওল্ড হোম ডে–কেয়ারের পরিচালক দম্পতি এমদাদুর বাপ্পী ও নুরের নাহার নোয়াখালী বন্ধুসভাকে দারুণ আয়োজন করায় ধন্যবাদ জানান। নুরের নাহার বলেন, ‘পয়লা ফাল্গুনে বন্ধুসভার বন্ধুরা আসবেন, এ ভেবে কয়েক দিন আমাদের ঈদের মতো আমেজ কাজ করেছে। আজ আমাদের সবার ঈদের আনন্দ।’
বিকেলে জমে ওঠে মুক্ত গানের আসর। গান পরিবেশন করেন নোয়াখালী বন্ধুসভার সাবেক সাংস্কৃতিক সম্পাদক নিথিন রায়। তার সঙ্গে সুর মিলিয়ে পুরো আসর জমিয়ে তোলেন বন্ধুরা। বিশেষ আকর্ষণ ছিল নোয়াখালী ওল্ড হোম ডে–কেয়ারের বাসিন্দা জাকিয়া খাতুন ও জাভেদা খাতুনের গান ও নৃত্য পরিবেশন। বেলা গড়িয়ে যখন আকাশজুড়ে নেমে আসছে গোধূলি, তখন বিদায় নেওয়ার পালা। কিন্তু ওল্ড হোম ডে–কেয়ারের আঙিনা ছাড়তে মনে সায় দিচ্ছিল না বন্ধুদের। তবু বিকেল সাড়ে পাঁচটায় সুন্দর কিছু স্মৃতি ও গল্প নিয়ে বন্ধুরা নিজেদের গন্তব্যে রওনা হন।
আয়োজনে বন্ধুদের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন উপদেষ্টা ও সাবেক সভাপতি নিলয় মিলন, সুমন নূর, সাবেক সাধারণ সম্পাদক সালমান ফারাভী, সহসভাপতি জাহিদ হাসান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জ্যানিসা আফরোজ, ইমতিয়াজ হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুজ্জামান রাকিব, অর্থ সম্পাদক উম্মে ফারহীন, দপ্তর সম্পাদক আবদুর রহিম, পাঠাগার ও পাঠচক্র সম্পাদক তাজকির হোসেন, জেন্ডার সমতাবিষয়ক সম্পাদক জান্নাতুল নাঈম, স্বাস্থ্য ও ক্রীড়া সম্পাদক প্রনয় মজুমদার, মুক্তিযুদ্ধ ও গবেষণা সম্পাদক আফরিনা আনিকা, কার্যনির্বাহী সদস্য ধ্রুব ভূঁইয়া, বন্ধু শাহরিয়ার সৈকত, মেহেরাজ ফয়সাল, নাদিমুর মারুফসহ অন্য বন্ধুরা।
সাধারণ সম্পাদক, নোয়াখালী বন্ধুসভা