লেখকের প্রেম, স্মৃতি ও বেদনার কাহিনি ‘অর্ধেক নারী অর্ধেক ঈশ্বরী’

মুরারিচাঁদ কলেজ বন্ধুসভার পাঠচক্রের আসরছবি: বন্ধুসভা

আহমদ ছফার ‘অর্ধেক নারী অর্ধেক ঈশ্বরী’ একটি আত্মজীবনীমূলক উপন্যাস। যেখানে লেখক তাঁর জীবনের প্রেম, স্মৃতি ও বেদনার কথা বলেছেন। কথক জাহিদ প্রিয়াতমা সোহিনীকে তাঁর অতীতের দুই নারী চরিত্রের কথা খুলে বলছেন—প্রথম দূরদানা আফরাসিয়াব, দ্বিতীয় শামারোখ।

দূরদানা ছিল এমন একজন নারী, যিনি সময়ের অচল নিয়মবিধির বাঁধন ভেঙেছিলেন—শার্ট-প্যান্ট পরে চলাফেরা, সাইকেল চালানো, পুরুষদের সঙ্গে ঝগড়া—সবই ছিল তাঁর স্বাভাবিক দৈনন্দিন কাজ। তিনি সমাজের প্রচলিত নারীত্বের ধারণাকে প্রশ্ন তুলেছিলেন। অন্যদিকে শামারোখ ছিলেন সৌন্দর্যের প্রকৃত সংজ্ঞা। তাঁর মধ্যে ছিল দায়িত্ব, সংগ্রাম ও পরিবর্তনের ছাপ; শিক্ষকতার সুযোগ পাওয়া, সক্রিয় সামাজিক প্রতিকূলতা সহ্য করেও যে তাঁর একটি স্বতন্ত্র স্থান ছিল, তা লেখক দৃঢ়ভাবে দেখিয়েছেন।

এই দুই নারীর সঙ্গে জাহিদের অনুভব ছিল গভীর, কিন্তু সম্পর্কের অবস্থা কখনোই পরিপূর্ণ হয়নি। প্রেম ও আকাঙ্ক্ষার পাশাপাশি রয়েছে অভিমান, ব্যথা ও অপূর্ণতার অনুভূতি। সোহিনীর কাছে জাহিদ এসব স্মৃতি তুলে ধরে, যেখানে ‘অর্ধেক আনন্দ অর্ধেক বেদনা; অর্ধেক কষ্ট অর্ধেক সুখ; অর্ধেক নারী অর্ধেক ঈশ্বরী’—এ ভাবনায় লালিত হয় মন।

‘অর্ধেক নারী অর্ধেক ঈশ্বরী’ প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯৯৬ সালে। এটি আহমদ ছফার একটি গুরুত্বপূর্ণ রচনা। যেখানে তিনি তাঁর ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা ও প্রেমকথা বর্ণনায় আনার সাহস দেখিয়েছেন। বইটি নিয়ে পাঠচক্রের আসর করেছে মুরারিচাঁদ কলেজ বন্ধুসভা। ১৭ সেপ্টেম্বর বেলা দুইটায় সৈয়দ হাতিম স্কুলের তিনতলার ৩০২ নম্বর রুমে এটি অনুষ্ঠিত হয়।

পাঠচক্র পরিচালনা করেন সাধারণ সম্পাদক লিমা তালুকদার। এ সময় উপস্থিত ছিলেন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সুস্মিতা প্রজ্ঞা, দপ্তর সম্পাদক শারমিন লিপি, সাংগঠনিক সম্পাদক উদয় সরকার, কার্যনির্বাহী সদস্য নাজমিন স্নেহা ও রকি আহমেদসহ অন্য বন্ধুরা।

উপন্যাসটি শুধু প্রেমের কাহিনি নয়; এটি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বাধা, নৈতিক দ্বিধা, ব্যক্তিত্বের বিকাশ ও অভ্যন্তরীণ সংঘর্ষেরও একটি চিত্র। ভাষা, ভাবনা ও বর্ণনায় লেখক অনেক বেদনাকে সহ্য করলেও সেটি হালকা করে বলেননি, সৌন্দর্য ও বেদনার একে-অপরের সঙ্গে মিল ঘটিয়েছেন।

সভাপতি, মুরারিচাঁদ কলেজ বন্ধুসভা