‘বন্ধুসভা অতি যত্নের সঙ্গে কাজটি সহজ করে তুলেছে’

শিমুলকান্দি ডিগ্রি কলেজে ভৈরব বন্ধুসভার ১৮৬তম পাঠের আসরছবি: আনাস খান

স্কুল পর্যায়ের পর এবার শেষ হলো ভৈরব বন্ধুসভার উদ্যোগে কলেজ পর্যায়ের পাঠচক্র। কলেজ পর্যায়ের শেষ পাঠচক্রটি অনুষ্ঠিত হয় ২৭ অক্টোবর উপজেলার শিমুলকান্দি ডিগ্রি কলেজে। ১৮৬তম পাঠের আসরের বিষয় ছিল বাংলা সাহিত্যের গুণী লেখক আহমদ ছফার পাঠক নন্দিত ‘মরণবিলাস’ উপন্যাস।

এর আগে সরকারি হাজী আসমত কলেজে হুমায়ূন আহমেদের ‘যখন গিয়েছে ডুবে পঞ্চমীর চাঁদ’ বই নিয়ে পাঠচক্র হয়। রফিকুল ইসলাম মহিলা কলেজে পাঠচক্র হয় শরৎচন্দ্রের ‘পরিণীতা’ আর জিল্লুর রহমান প্রিমিয়ার ব্যাংক স্কুল অ্যান্ড কলেজে পাঠের আসর বসে আনিসুল হকের ‘কিশোর তুমি বড় হবে’ বইটি নিয়ে। প্রতিটি আসর ভৈরব বন্ধুসভার ফেসবুক পেজ থেকে লাইভ সম্প্রচার হয়। লাইভ সমন্বয় করেন বন্ধু নাহিদ হোসাইন ও তথ্য ও প্রযুক্তি সম্পাদক সামির রহমান।

শিমুলকান্দি ডিগ্রি কলেজে ভৈরব বন্ধুসভার ১৮৬তম পাঠের আসর
ছবি: আনাস খান

শেষ পাঠচক্রের ‘মরণবিলাস’ উপন্যাসের কাহিনির মূল নায়ক ফজলে ইলাহী একজন রাজনীতিক। তিনি সরকারের প্রভাবশালী মন্ত্রী। সর্বশেষ তার হাতে ছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। কঠিন রোগের কারণে জীবনের অনিশ্চয়তা তাকে সময়ের আগেই কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি করে। একজন মহাক্ষমতাবান মন্ত্রী মৃত্যুশয্যায় শুয়ে আছেন, কিন্তু তার শয্যার পাশে একজন পেশাদার স্বার্থান্বেষী সেবক ব্যতীত কেউ নেই। এমনকি নেই পরিবার-পরিজনও। ক্ষণে ক্ষণে জ্ঞান হারানো মন্ত্রী সাহেব যখনই জ্ঞান ফিরে পায়, তখনই মস্তিষ্কের অলিগলি ছাপিয়ে তার অতীত জীবনের সব স্মৃতি ভিড় করে আসে চোখের সামনে। সেসব স্মৃতি মূলত অসৎ কর্মের, পাপের স্মৃতি। তার দুরবস্থা টের পেয়ে যখন সেবক মাওলা বক্স তাকে তওবা করানোর জন্য মাওলানা ডাকার অনুমতি চায়, তখনই ধমক খেয়ে তাকে থেমে যেতে হয়। মূলত রহস্যময় কঠিন চরিত্রের মাওলা বক্সের জীবন বাস্তবতা নিয়ে উপন্যাসের কাহিনি এগিয়ে চলে।

শিমুলকান্দি ডিগ্রি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ তাজরুন নাহার বলেন, ‘এই সময়ে এসে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গিয়ে মুদ্রিত বই নিয়ে আলোচনা অতি কঠিন কাজ। বন্ধুসভা অতি যত্নের সঙ্গে কাজটি সহজ করে তুলেছে। এই ধারা বজায় থাকলে অন্তত ভৈরবে মুদ্রিত বইয়ের প্রতি শিক্ষার্থীদের আগ্রহ না বাড়ার কারণ দেখছি না।’

কুইজ পর্বের বিজয়ীদের হাতে তুলে দেওয়া হয় ম্যাগাজিন কিশোর আলো
ছবি: আনাস খান

গ্রন্থ আলোচনা শেষে মনোযোগী শ্রোতাদের জন্য ছিল কুইজ পর্ব। কুইজ পর্বের বিজয়ীদের হাতে তুলে দেওয়া হয় ম্যাগাজিন কিশোর আলো।

কলেজ পর্যায়ের বিভিন্ন পাঠচক্রে মুখ্য আলোচনায় অংশ নেন ভৈরব বন্ধুসভার উপদেষ্টা সুমাইয়া হামিদ, সভাপতি প্রিয়াংকা, সাধারণ সম্পাদক মানিক আহমেদ, সাবেক সাধারণ সম্পাদক রিফাত হোসেন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল হোসেন, সাবেক পাঠাগার ও পাঠচক্র সম্পাদক জান্নাতুল মিশু, বর্তমান পাঠাগার ও পাঠচক্র সম্পাদক তানসি নাহার, অর্থ সম্পাদক নাফিস রহমান ও প্রশিক্ষণ সম্পাদক মহিমা মেধা।

সভাপতি প্রিয়াংকা ও সাধারণ সম্পাদক মানিক আহমেদ বলেন, ‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠচক্র ভৈরবসভার নতুন উদ্যোগ নয়। এর আগেও আমরা একাধিকবার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গিয়ে পাঠচক্রের ফেরি করেছি। এবার খেয়াল করেছি পাঠচক্রে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা নির্ধারিত বইটি মনোযোগ দিয়ে পড়ে আসে। এখানেই আমাদের সফলতা।’

পাঠচক্র শেষে শিমুলকান্দি ডিগ্রি কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ভৈরব বন্ধুসভার বন্ধুরা
ছবি: আনাস খান

প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক সুমন মোল্লা বলেন, পাঠচক্রের যাত্রা যেন থমকে না যায়। এই চ্যালেঞ্জ নিয়েই বন্ধুসভার কর্মীদের এগিয়ে যেতে হবে।

কলেজ পর্যায়ের পাঠচক্রের আর্থিক সহযোগী ছিল এনআরবিসি ব্যাংক। ব্যাংকটির কিশোরগঞ্জ জেলা শাখার ব্যবস্থাপক রাকিবুল হাসান সবুজ ভৈরব বন্ধুসভার সাবেক সভাপতি। মূলত তাঁর আগ্রহে ব্যাংকটির কিশোরগঞ্জ এরিয়ার ১৭টি শাখা-উপশাখার কর্মীরা বন্ধুসভার বন্ধুদের পাঠচক্র কার্যক্রমকে উৎসাহিত করতে নিজেদের বেতনের জমানো টাকা থেকে ২০ হাজার টাকা মূল্যমানের ৫ টাকা, ২ টাকা ও ১ টাকার ১০ হাজার মুদ্রা ও কিছু কড়ি উপহার দেন।

শেষ দিন পাঠচক্রে উপস্থিত ছিলেন এনআরবিসি ব্যাংকের ডিএমডি হারুনুর রশিদ, ময়মনসিংহ জোনের প্রধান ও ইভিপি মাঈনুল হোসেন কবীর। ব্যাংকটির কিশোরগঞ্জ জেলা শাখার ব্যবস্থাপক রাকিবুল হাসান সবুজ বলেন, ‘সময়টা প্রযুক্তির। এ সময়ে শিক্ষার্থীদের হাতে মুঠোফোন থাকে, বই নয়। এমন পরিস্থিতিতে ভৈরবসভার বন্ধুরা বই নিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গিয়ে ঘুরছে। এর চেয়ে ভালো কাজ আর কী হতে পারে! ভালো কাজকে এগিয়ে নিতে সহকর্মীরা নিজেদের টাকা সংগ্রহ করে বন্ধুসভাকে দিয়েছেন।’

সাধারণ সম্পাদক, ভৈরব বন্ধুসভা