জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধুসভার সম্প্রীতির ইফতার

ইফতার আয়োজন শেষে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধুসভার বন্ধুরাছবি: বন্ধুসভা

জাহিদ মামা (৫৭)। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভ্যান চালিয়ে দিনাতিপাত করেন। পবিত্র রমজান মাসে রোজা রেখে এ কাজ করতে বেশ কষ্ট হয়ে যায়। ইফতারে কেউ কিছু দিলে ভালো খাবার জোটে। অন্যথায় রাস্তার পাশের কোনো খাবারের দোকান বা টংয়ে বসে কোনোরকমে ইফতার করেন। বাড়িতে টাকা পাঠাতে হয় বলে ইফতারে বেশি খরচও করতে পারেন না তিনি।

২০ মার্চ জাহিদ মামার মতো এমন ১৫ জন সুবিধাবঞ্চিত মানুষকে নিয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের জহির রায়হান অডিটরিয়ামের সেমিনার কক্ষে ইফতার করেছেন জাবি বন্ধুসভার বন্ধুরা। ইফতারে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, সুবিধাবঞ্চিত মানুষ, বন্ধুসভার বন্ধু ও ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সংগঠনের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ অন্তত ৭০ জন উপস্থিত ছিলেন।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মনোয়ার হোসাইন তুহিন শুভেচ্ছা বক্তব্যে বলেন, ‘জাবি বন্ধুসভা সব সময়ই ক্যাম্পাসের বিভিন্ন ভালো ও ইনোভেটিভ কার্যক্রম করে এসেছে। আমি চাই আগামী দিনেও তাদের এই সুবিশাল কর্মযজ্ঞ অব্যাহত থাকুক।’

প্রক্টর অধ্যাপক মোহাম্মদ আলমগীর কবীর বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে পজিটিভিটি ছড়িয়ে দিতে সংগঠনগুলো প্রচুর কাজ করে যাচ্ছে, যা প্রশংসার দাবিদার। জাবি বন্ধুসভাকে ধন্যবাদ জানাই, এক ছাদের নিচে এতগুলো সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের সঙ্গে ইফতার করার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য।’

অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক রনি হোসাইন বলেন, ‘ছাত্রজীবনে আমার অনেক সংগঠন করার সুযোগ হয়েছে। ওই সময় থেকেই জাবি বন্ধুসভার প্রতি একটা ভালো লাগা কাজ করে। এখন নানা ব্যস্ততায় সশরীর উপস্থিত থাকতে না পারলেও সব সংগঠনের কার্যক্রম সম্পর্কে বিভিন্ন সময় খোঁজখবর নিয়ে থাকি, যার মধ্যে বন্ধুসভা অন্যতম।’

লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষক মনির শিকদার বলেন, ‘ইফতার খাওয়ার পর সুবিধাবঞ্চিত মানুষদের মুখে যে হাসি দেখতে পেয়েছি, তা আমাদের মনে প্রশান্তি এনে দিয়েছে। ধন্যবাদ জাবি বন্ধুসভার বন্ধুদের। তোমাদের এ ধরনের ভালো কাজ অব্যাহত থাকুক।’

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধুসভার সম্প্রীতির ইফতার
ছবি: বন্ধুসভা

বন্ধুসভা জাতীয় পরিচালনা পর্ষদের সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ হোসেন মল্লিক বলেন, ভালো কাজগুলো এভাবেই ছড়িয়ে পড়ুক সবার মধ্যে। বন্ধুরা চাইলেই একা ইফতার করতে পারত; কিন্তু এই যে পরিশ্রম করে সবাইকে একসঙ্গে নিয়ে ইফতার করছে, এটাই বন্ধুসভা।

এ ছাড়া উপস্থিত ছিলেন বন্ধুসভা জাতীয় পরিচালনা পর্ষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. রেদোয়ান মাহমুদ রেজা, সাংগঠনিক সম্পাদক নেওয়াজুল মওলা, ঢাকা মহানগর বন্ধুসভার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হামিদা জান্নাত, প্রশিক্ষণ সম্পাদক গিয়াসউদ্দিন মুন্না। ইফতার আয়োজনের আহ্বায়ক ছিলেন বন্ধু আব্দুল্লাহ-আল-রশিদ ও কাউসার আনসারী। তাঁদের সহযোগিতা করেন অন্য বন্ধুরা।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধুসভার সহসভাপতি নাজমুস সাকিব বলেন, ‘আমরা ভেবে দেখলাম, বাকি যাদের দাওয়াত দেব, সবাই আসলে ইফতার ভালোভাবেই করে কিংবা অনেক জায়গা থেকেই দাওয়াত পায়। তাই এবার আমরা তাদের দাওয়াত দিয়েছি, যাদের দাওয়াত দেওয়ার মানুষ নেই বললেই চলে। এটাই তো রোজার মাসের বিশেষত্ব।’

পরিবেশ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক, জাবি বন্ধুসভা