সিলেট বন্ধুসভার পাঠচক্রে জহির রায়হানের ‘আরেক ফাল্গুন’
‘আরেক ফাল্গুন’ উপন্যাসটি যে প্রেক্ষাপটের ওপর লেখা হয়েছে তা হলো ১৯৫৫ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে ভাষা শহীদদের স্মরণ করা। মূল চরিত্র মুনিম; সে একজন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রনেতা। এ ছাড়াও আছে সালমা, রেনু, বানু, নিলা, আসাদ, কবি রসুল প্রমুখ; সবাই শিক্ষার্থী। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি মর্মান্তিক এবং একইসঙ্গে বীরত্বপূর্ণও।
কাহিনি শুরু হয় ঢাকার তৎকালীন ভিক্টোরিয়া পার্কে সিপাহী বিদ্রোহের নির্মম স্মৃতিবিজড়িত বর্ণনা দিয়ে। এরপর দেখা যায়, সাদা শার্ট, সাদা প্যান্ট পরিহিত খালি পায়ে একটি ছেলে হেঁটে যাচ্ছে; মুনিম! তার পাশাপাশি সালমা, রেনু, বানু, নিলা, আসাদ, কবি রসুল প্রমুখ। ভাষা শহীদদের মৃত্যুকে সার্থক করার জন্য আরও একবার আন্দোলন শুরু হলো বাংলা মাতৃভাষাকে রাষ্ট্রীয় ভাষা করার দাবিতে।
তিন দিন সর্বত্র খালি পায়ে চলা, শহীদদের স্মরণে রোজা রাখা এবং শহীদদের স্মরণে কালো ব্যাজ পরা; এসব শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি। কিন্তু স্বৈরাচারী শাসকদের তাতেও বাধা। তাই বন্ধ করল সব মিছিল-মিটিং, বেআইনি করে দেওয়া হলো সভা, এমনকি কালো ব্যাজ পরা ও রাজপথে স্লোগান। অদম্য প্রাণের উচ্ছ্বাসে ভেঙে পড়ে সব নতুন আইন আর বেআইন।
১৯৫৫ সালের ২১ ফেব্রুয়ারির আগের রাতে মেডিকেল হোস্টেল, মুসলিম হল, চামেলি হাউজ, ইডেন হোস্টেল, ফজলুল হক হলের শিক্ষার্থীরা অতন্দ্র হয়ে জেগে থাকল সারা রাত, আবার কোথাও কোথাও জটলা বেঁধে গাইতে লাগল ‘ভুলব না ভুলব না, ২১ শে ফেব্রুয়ারি’। স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত হলো চারদিক; সেগুলো যেন তীরের মতো বিঁধে যাচ্ছিল স্বৈরাচারী শাসকের কানে! তাই পুলিশ রাতেই আক্রমণ করে মেডিকেল কলেজের হোস্টেলে, গ্রেপ্তার করে অসংখ্য শিক্ষার্থীকে।
মনে অদম্য শক্তি নিয়ে ২১ ফেব্রুয়ারি সকালবেলা সবাই মিলে গণজমায়েত হলো বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে এবং উত্তোলন করে কালো পতাকা। সেখানে আবার হামলা চালায় বর্বর পুলিশবাহিনী, আবারও চালানো হয় গ্রেপ্তার অভিযান এবং উঠানো হয় প্রিজন ভ্যানে। প্রিজন ভ্যান থেকে ক্ষুব্ধ হয়ে শিক্ষার্থীরা স্লোগান দেয় ‘বরকতদের খুন ভুলব না, শহীদদের খুন ভুলব না, শহীদ স্মৃতি অমর হোক।’
এর মধ্যে জেলের গেটে পৌঁছে যায় প্রিজন ভ্যানগুলো। শত শত শিক্ষার্থীর নাম ধরে ডাকতে ডাকতে ক্লান্ত হয়ে যায় ডেপুটি জেলার। তখন একজন বলে উঠল, ‘এতেই ঘাবড়ে গেলেন নাকি? আসছে ফাল্গুনে আমরা কিন্তু দ্বিগুণ হবো!’
১৮ অক্টোবর বইটি নিয়ে পাঠচক্র করেছে সিলেট বন্ধুসভা। প্রথম আলো সিলেট অফিসে এটি অনুষ্ঠিত হয়। পাঠচক্রে বইটির প্রকাশকাল, মূল বিষয়বস্তু নিয়ে আলোচনা করেন বন্ধু ফয়সাল আহমেদ। তিনি বলেন, ‘“আরেক ফাল্গুন” উপন্যাসটি যদিও জহির রায়হানের একটি কল্প-উপন্যাস; তবু তাতে যেন আবেগ আর বিবেকের পরিস্ফুটনের ফলে হয়ে উঠেছে বাস্তব। জহির রায়হানের চলচ্চিত্রিত উপন্যাস লেখার স্বভাবে তা হয়ে উঠেছে আরও গতিময়। প্রতিটি চরিত্রে যেন চলে আসে চলমান এক তেজদীপ্ত প্রাণোচ্ছলতা।’
বন্ধু প্রণব চৌধুরী বলেন, ‘আরেক ফাল্গুন’ জহির রায়হানের এমন একটি উপন্যাস, যা একসঙ্গে অনেকগুলো ঘটনা নিয়ে চলেছে। এমনকি ঘটনার পেছনের একজনের জীবনও।
পাঠচক্রে আরও উপস্থিত ছিলেন বন্ধু সমির বৈষ্ণব, দেব রায় সৌমেন, দৃষ্টি বর্মন, লাবাহ সুন্নাহ রহমান, হিয়া রহমান, সুবর্ণা দেব, জয় তালুকদার, জুনায়েদ আহমেদ, কৃত্য ছত্রী, সিদরাতুল মুনতাহা, আকরামুল হোসেন, ওয়াসিফ হাসনাত, আসমান আহমেদ, সুমাইয়া আনঞ্জুম, সাইফুল ইসলামসহ অন্যান্য বন্ধুরা।
পাঠাগার ও পাঠচক্র সম্পাদক, সিলেট বন্ধুসভা