চায়ের দেশ শ্রীমঙ্গলে বনযাত্রা

ভৈরব বন্ধুসভার বনযাত্রা
ছবি: বন্ধুসভা

গত ২৬ ফেব্রুয়ারি, বুধবার। ঘড়ির কাঁটায় সকাল সাতটা। প্রথম আলো ভৈরব অফিসের নিচে একে একে হাজির হতে থাকেন বন্ধুরা। সবার মধ্যে আনন্দ ও উত্তেজনা বিরাজ করছে। এবারের গন্তব্য শ্রীমঙ্গল ও মৌলভীবাজারের মনোমুগ্ধকর কিছু স্পট।

যাত্রা শুরুর পর সাধারণ সম্পাদক এরফান হোসেন সবার উপস্থিতি নিশ্চিত করে নিরাপদ ভ্রমণের জন্য দোয়া করলেন। সবাই মোনাজাতে অংশ নেন। বাসে শুরু হলো আনন্দের পরিবেশ, যেখানে গান ও নাচে সবাইকে মাতিয়ে রাখেন বন্ধু মানিক, সাইফ, আনাস, শাদাব, হিমু, অন্বেষা, মাহিন, রামিম, ইফতি, অর্ণব, সুমাইয়াসহ অন্য বন্ধুরা। লটারির টিকিট বিক্রির কাজেও অংশ নেন অন্বেষা, মাহিন ও জিহাদ।

যাত্রাবিরতি দেওয়া হয় শ্রীমঙ্গলের রাবার বাগানে, যেখানে সকালের নাশতা পরিবেশন করা হয়। ভুনা খিচুড়ি খেয়ে বন্ধুরা বাগানের চারপাশ ঘুরে দেখেন এবং প্রকৃতির সৌন্দর্যে মুগ্ধ হন। চারপাশে সবুজের বিশাল সমারোহ, রাবারগাছের স্নিগ্ধ ছায়া, বাতাসে ভেসে আসা ফুলের গন্ধ—সত্যিই মন্ত্রমুগ্ধের মতো ছিল।

ভৈরব বন্ধুসভার বনযাত্রা
ছবি: বন্ধুসভা

প্রকৃতির সুন্দর দৃশ্য দেখতে দেখতে বন্ধুরা আবার বাসে উঠে পরবর্তী স্পটের উদ্দেশে রওনা দেন। বাসে সাংস্কৃতিক সম্পাদক মোশারফ রাব্বি ও অন্য বন্ধুরা সবাইকে গানের সুরে মাতিয়ে রাখেন। কখনো হাসির ঝরনা, কখনো গান—সবকিছু মিলে এক আনন্দঘন পরিবেশ।

পথিমধ্যে বাস একটি রিসোর্টের সামনে থামে। রিফ্রেশমেন্ট ও বিশ্রামের জন্য এটি জরুরি ছিল। এখানকার চারপাশের গাছগাছালি, শান্ত পরিবেশ ও কাঁপতে থাকা স্নিগ্ধ বাতাস সবাইকে এক ভিন্ন দুনিয়ায় নিয়ে যায়।

এরপর একটি রেস্টুরেন্টে দুপুরের খাবার শেষে পড়ন্ত বিকেলে সূর্য যখন প্রায় অস্তমিত, আমাদের বাস পৌঁছাল চা–বাগানে। বাস থেকে নেমে বন্ধুরা ছড়িয়ে পড়েন চারপাশে। চা–বাগানের বিস্তীর্ণ সবুজ প্রান্তর, দূরে পাহাড়ের সারি, আকাশের নীলাভ রং, এমন প্রকৃতি দেখে সবাই প্রশান্তি অনুভব করেন। চা–পাতার সুবাস ও সবুজের মধ্যে হারিয়ে যাওয়া।

ভৈরব বন্ধুসভার বনযাত্রা
ছবি: বন্ধুসভা

উপদেষ্টা ওয়াহিদা আমিন প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন, ‘এ যেন আপনজনদের সঙ্গেই পথচলা। বন্ধুসভা শুধু একটি সংগঠন নয়, এটি পরিণত হয়েছে এক ভালোবাসার পরিবারে। আনন্দভ্রমণের প্রতিটি মুহূর্ত উপভোগ করছি।’

কার্যনির্বাহী সদস্য প্রিয়াংকা বলেন, ‘পিকনিক মানেই আমার কাছে সবুজে ঘেরা চারদিক। এই ভ্রমণে প্রকৃতির সঙ্গে মিশে থাকা আমার জন্য এক স্বর্গীয় অনুভূতি।’

সাধারণ সম্পাদক এরফান হোসেন বলেন, ‘আনন্দভ্রমণ আনন্দদায়ক হয়ে ওঠে বন্ধুদের সঙ্গে। আশা করছি, এই ভ্রমণ সবাইকে চাঙা করে তুলবে এবং প্রকৃতির সৌন্দর্য নতুনভাবে উৎসাহিত করবে।’

আনারস কেনার হিড়িক
ছবি: বন্ধুসভা

সন্ধ্যা হয়ে গেলে সবাই বধ্যভূমির দিকে চলে যান। সেখানে নেমে দেখতে পেলেন সারি সারি ভ্যানে রাখা ছোট–বড় আনারস। এ সময় আনারস কেনার হিড়িক পড়ে যায়। কেউবা লবণ মাখিয়ে আনারস খাচ্ছেন, কেউ আবার প্যাকেট ভর্তি করে আনারস নিচ্ছেন।

র‍্যাফল ড্র অনুষ্ঠিত হয় ফেরার পথে বাসের ভেতরে। সহসভাপতি তোফাজ্জল হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক এরফান হোসেন সঞ্চালনা করেন। উপদেষ্টা সুমাইয়া হামিদ, ওয়াহিদা আমিন, সুমন মোল্লা, সভাপতি জান্নাতুল মিশু, বন্ধু ছিদরাতুল রশিদ, প্রান্ত ও লিয়াকত তাঁদের মতামত প্রকাশ করেন। সবাই বলেন, এটি ছিল একটি প্রাণবন্ত ও অসাধারণ ভ্রমণ, যা বন্ধুত্বের সম্পর্ক আরও মজবুত করেছে।

সহসভাপতি, ভৈরব বন্ধুসভা