বৃদ্ধাশ্রমে ঢাকা মহানগর বন্ধুসভার এক বিকেল

প্রবীণ নিবাসের বয়োজ্যেষ্ঠ বাসিন্দাদের সঙ্গে ঢাকা মহানগর বন্ধুসভার বন্ধুদের ঈদ আনন্দ ভাগাভাগিছবি: বন্ধুসভা

ষাটোর্ধ্ব ইয়ামিন আহমেদ। দীর্ঘদিন বিদেশে কাজ করে দেশে ফিরেছেন, গড়ে তুলেছেন ব্যবসা-বাণিজ্য, সেই সঙ্গে বিশাল অট্টালিকা। বাবা মারা যাওয়ার পর নিজের ভাইবোনদের মানুষ করার জন্য বিয়ে পর্যন্ত করেননি। কিন্তু তাঁরাই তাঁকে ধোঁকা দিয়ে করেছেন নিঃস্ব। তাঁর ঠিকানা এখন প্রবীণ নিবাস।

দুই ছেলে, এক মেয়ে, স্ত্রী নিয়ে গোছানো সংসার ছিল হাফিজের (৬৫)। ঢাকার বুকের একাধিক অট্টালিকা লিখে দিয়েছেন স্ত্রী ও ছেলেমেয়ের নামে। কিন্তু তাঁরাই তাঁকে তাড়িয়ে দিয়েছেন। আজ তিনি বাস্তুহারা।

ওপরের দুটি গল্পের চরিত্র কাল্পনিক হলেও ঘটনাগুলো একদমই সত্য। এমন অসংখ্য গল্পের ঠিকানা সাভারের অদূরে ধামরাই উপজেলার শৈলান প্রবীণ নিবাসের। ২১ মার্চ, শুক্রবারের স্নিগ্ধ সকালে ঢাকা মহানগর বন্ধুসভার বন্ধুরা সেখানে যান। উদ্দেশ্য ভালোবাসা বিনিময় ও ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করে নেওয়া।

প্রথমেই বন্ধুরা প্রবীণ নিবাসটি ঘুরে দেখেন। আসরের নামাজের পর শুরু হয় কুশল বিনিময় ও উপহার বিতরণ। ঈদের উপহার পেয়ে তাঁদের চোখে-মুখে খুশির ঝলক সবার মনে প্রশান্তি বয়ে আনে। একজন প্রবীণ বলেন, ‘আগে ঈদ মানেই ছিল বাড়ির সবার জন্য বাজার করা, নতুন জামা কেনা, রান্নার আয়োজন করা। এখন এসব শুধুই স্মৃতি।’

বন্ধুদের সঙ্গে খোশগল্পে প্রবীণদের কেউ জানালেন তাঁর পুরোনো দিনের স্মৃতি, কেউ-বা ভাগ করলেন জীবনের সুখ-দুঃখের গল্প
ছবি: বন্ধুসভা

আরেকজন বললেন, ‘আমার ছেলে-মেয়ে বিদেশে থাকে। ঈদের দিন ফোন করে, কিন্তু তাঁদের গলাতে সেই উষ্ণতা পাই না। আজ তোমাদের দেখে মনে হচ্ছে, সত্যি আমার কেউ এসেছে।’

বন্ধুসভার বন্ধুদের সঙ্গে প্রবীণদের খোশগল্প দেখে মনে হচ্ছিল, শত বছর পর যেন আপন মানুষদের সঙ্গে প্রাণ খুলে কথা বলছেন তাঁরা। কেউ জানালেন তাঁর পুরোনো দিনের স্মৃতি, কেউ-বা ভাগ করলেন জীবনের সুখ-দুঃখের গল্প। সন্ধ্যা হলে সবাই মিলে একসঙ্গে ইফতার করেন। ইফতারে গ্রামীন ডানোর পক্ষ থেকে ছিল শক্তি দই।

ইফতার শেষে প্রবীণদের থেকে বিদায় নিয়ে রওনা দিই ফিরতি পথে। বিদায়ের সময় হলে এক প্রবীণ বললেন, ‘আজ সত্যি মনে হলো ঈদ পালন করলাম।’ কেউ বললেন, ‘তোমরা আবার আসবে তো?’ বন্ধুরা প্রতিশ্রুতি দিলেন, ভালোবাসার এই গল্প এখানেই শেষ হবে না।

বন্ধু, ঢাকা মহানগর বন্ধুসভা