শোক দিবসের পাঠচক্রে ‘আমার দেখা নয়াচীন’

ভৈরব বন্ধুসভার পাঠচক্র
ছবি: আনাস খান

বাংলার অবিসংবাদিত নেতা শেখ মুজিবুর রহমান। আজকের এই স্বাধীন বাংলাদেশ গড়ার কারিগর তিনি। ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস ও এই মহান নেতার ৪৮তম শাহাদাতবার্ষিকীর দিনে প্রথম আলো ভৈরব অফিসে মুদ্রিত বই পড়ার দলগত আসর পাঠচক্রে বসেন ভৈরব বন্ধুসভার বন্ধুরা। এবারের বিষয় ছিল শেখ মুজিবুর রহমানের লেখা বই ‘আমার দেখা নয়াচীন’। ১৫৯তম পাঠের আসরটি সঞ্চালনা করেন পাঠচক্র ও পাঠাগার সম্পাদক জান্নাতুল মিশু।

তরুণ রাজনৈতিক নেতা শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৫২ সালের অক্টোবরে পিস কনফারেন্স অব দ্য এশিয়ান অ্যান্ড প্যাসিফিক রিজিয়নসে পাকিস্তান প্রতিনিধিদলের সদস্য হিসেবে নয়া চীন সফর করেন। সেই সময়ের স্মৃতিনির্ভর এ ভ্রমণকাহিনী ১৯৫৪ সালে কারাগারে রাজবন্দী থাকাকালে তিনি রচনা করেন। তথ্যগুলো জানা গেল ভৈরব বন্ধুসভার উপদেষ্টা সুমাইয়া হামিদের কাছ থেকে।

উপদেষ্টা ওয়াহিদা আমিন পলি বইয়ের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করেন। তিনি বলেন, সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ, তাদের জীবনযাত্রা, অন্ন, বস্ত্র, শিক্ষা, চিকিৎসাসহ মৌলিক চাহিদাগুলো মেটাতে চীন সরকার বিপ্লবের পর কীভাবে উন্নতি করেছে, তা–ই ছিল এই বইয়ের মূল্য উপজীব্য পাঠ্য। তিনি সম্মেলনে অংশগ্রহণের পাশাপাশি নয়াচীনের প্রতিটি বিষয় গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করেছেন।

বইটির শুরুর দিকের লাইনগুলো দেখেই শেখ মুজিবুর রহমানের দৃষ্টির গভীরতা বোঝা যায়। তিনি লিখেছেন, ‘১৯৫২ সালে জেল থেকে বের হলাম, রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের পর। জেলে থাকতে ভাবতাম আর মাঝে মাঝে মাওলানা ভাসানী সাহেবও বলতেন, যদি সুযোগ পাও একবার চীন দেশে যেও।’ অল্প দিনের মধ্যে তারা কত উন্নতি করেছে। চীন দেশের খবর আমাদের দেশে বেশি আসে না এবং আসতে দেওয়াও হয় না। তবু যতটুকু পেতাম, তাতেই মনে হতো যদি দেখতে পেতাম কেমন করে তারা দেশকে গড়েছে! অর্থাৎ নয়াচীন গ্রন্থে পুরো লেখায় বঙ্গবন্ধু খুঁজেছেন নিজ দেশ গঠনের উপায়।

পাঠচক্রের আসরে বন্ধুরা
ছবি: আনাস খান

প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক সুমন মোল্লা বলেন, ‘ভালো লাগার বিষয় হলো বঙ্গবন্ধুর লেখা তিনটি বই “অসমাপ্ত আত্মজীবনী”, “কারাগারের রোজনামচা” ও “আমার দেখা নয়াচীন” আমরা পাঠের আসরে আলোচনা করেছি। এই মহান নেতা বেঁচে থাকলে হয়তো বাংলাদেশের দৃশ্যপট আরও বদলে যেত।’

আলোচনায় আরও যুক্ত হন উপদেষ্টা আসাদুজ্জামান সোহেল, সাবেক সাধারণ সম্পাদক ছিদরাতুল রশিদ, নতুন বন্ধু আদৃতা রহমান। সাধারণ সম্পাদক রিফাত হোসেন বলেন, পিকিং, তিয়ানজিং, নানকিং, ক্যান্টন, হ্যাংচো সব শহরে গিয়ে তিনি দেখতে চেয়েছেন নতুন স্বাধীনতার সঙ্গে তারা কত দূর পর্যন্ত সন্তুষ্ট, সবার মনে কীভাবে সম্ভব হলো দেশপ্রেমের গাঁথুনি বুনে দেওয়ার। মাও সে–তুংয়ের বিষয়ে বঙ্গবন্ধু উল্লেখ করেছেন এভাবে, ‘এই মাও সে–তুং! ৬০ কোটি লোকের নেতা। দেশের লোক এত ভালোবাসে এঁকে! হবেই তো, ত্যাগী, দেশকে ও জনগণকে তিনি ভালোবাসেন বলে জনগণও তাঁকে ভালোবাসে ও বিশ্বাস করে।’

কার্যনির্বাহী সদস্য প্রিয়াংকা তাঁর আলোচনায় বলেন, ‘শেখ মুজিবুর রহমান উপলব্ধি করার চেষ্টা করেছেন, মাত্র ৪ বছরে তারা কীভাবে শতকরা ৩০ জন লোককে শিক্ষিত করে ফেলেছেন। তিনি প্রিভিলেজড শিশুদের সম্পর্কে বলেছেন, “নতুন মানুষের একটা জাত গড়ে তুলেছে নয়াচীন। ১৫-২০ বছর পরে এরা যখন লেখাপড়া শিখে মানুষ হয়ে দেশের জন্য কাজ করবে, তখন ভেবে দেখুন নয়াচীন কোথায় যেয়ে দাঁড়াবে?” তিয়ানজিং শহর উত্থানের কাহিনি, শহরের জীবন ব্যবস্থাপনা, হাসপাতাল, শিল্পকারখানা, আবহাওয়া ইত্যাদির মধ্যে তিনি বারবার দেখতে চেয়েছেন কতটুকু সম্ভাবনা তিনি এখান থেকে নিয়ে যেতে পারেন।’

সভাপতি নাহিদ হোসাইন বলেন, বাংলাদেশ গড়ার স্থপতি শেখ মুজিবুর রহমান। স্বাধীন বাংলাদেশকে নতুন রূপে সাজানোর জন্য যে স্বপ্ন তিনি দেখেছিলেন, তার প্রতিফলন ফুটে উঠেছে ‘আমার দেখা নয়াচীন’ বইয়ে। পাঠের আসরে আরও উপস্থিত ছিলেন বন্ধু প্রাপ্তি ঘোষ, সাদাব, অন্বেষা।

পাঠচক্র ও পাঠাগার সম্পাদক, ভৈরব বন্ধুসভা