স্কুলশিক্ষার্থীদের নিয়ে চট্টগ্রাম বন্ধুসভার পাঠচক্রে ‘চাঁদের পাহাড়’

প্রবর্তক স্কুল অ্যান্ড কলেজের লাইব্রেরি কক্ষে পাঠচক্রের আসর শেষে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে চট্টগ্রাম বন্ধুসভার বন্ধুরাছবি: বন্ধুসভা

ওপার বাংলার ছোট্ট একটি গ্রামের সাধারণ পরিবারে বেড়ে ওঠা এক যুবকের নাম শঙ্কর। পড়াশোনা শেষে একটি চাকরি করে সে। শৈশবে যখন আফ্রিকা মহাদেশের গহিন অরণ্যের রোমাঞ্চকর কাহিনি শুনেছে, তখন থেকেই তার স্বপ্ন সেই অরণ্য অভিযানে যাওয়া। একদিন স্বপ্নপূরণের সুযোগ এসে যায়। অভিযান হয়ে ওঠে এক রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা।

ঘটনাটি বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘চাঁদের পাহাড়’ উপন্যাসের। ১৯৩৭ সালে প্রকাশিত এই উপন্যাসে শঙ্করের অভিযানের রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতার পাশাপাশি ফুটে উঠেছে আফ্রিকার গহিন অরণ্যের পাহাড়, জঙ্গল, মরভূমিসহ নানা ধরনের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও বিচিত্র রকমের ঘটনাবলি।

২১ আগস্ট ‘চাঁদের পাহাড়’ উপন্যাস নিয়ে পাঠচক্রের আসর করেছে চট্টগ্রাম বন্ধুসভা। হিরন্ময় কথকতা সিরিজ পাঠচক্রের নবম পর্বটি অনুষ্ঠিত হয় নগরীর প্রবর্তক স্কুল অ্যান্ড কলেজের লাইব্রেরি কক্ষে। এতে অংশ নেয় প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থীরা।

আলোচক হিসেবে ছিলেন চট্টগ্রাম বন্ধুসভার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাঈদ আল সোহেল। তিনি বলেন, ‘চাঁদের পাহাড়’ উপন্যাসের গল্প শুরু হয় বাংলার এক ছোট্ট গ্রামে বেড়ে ওঠা শঙ্কর নামক এক যুবকের মাধ্যমে। সে উপন্যাসের প্রধান চরিত্র। একদিন সে একটি পুরোনো ডায়েরি খুঁজে পায়, যেখানে একজন অভিযাত্রী আফ্রিকার এক রহস্যময় পাহাড়ের কথা লিখে গেছেন। সেই পাহাড়ে হীরা ও সোনার খনি আছে! এই পাহাড়টিকে স্থানীয় লোকজন চাঁদের পাহাড় বলে ডাকে। এই ঘটনা শঙ্করকে এতটাই আচ্ছন্ন করে ফেলে যে সে তার চাকরি ছেড়ে দিয়ে আফ্রিকা যাত্রার সিদ্ধান্ত নেয়।

শঙ্কর জাহাজে চেপে আফ্রিকার উদ্দেশে রওনা হয়। প্রথমে দক্ষিণ আফ্রিকায় ডারবান বন্দরে পৌঁছায়। সেখানে সে বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে পরিচিত হয় এবং কাজ করে কিছু টাকা জমায়। তারপর এক ভয়ানক জঙ্গলের দিকে অভিযান শুরু করে। পথে তার সঙ্গে পরিচয় হয় ডিয়েগো আলভারেজের, এক রুগ্‌ণ পর্তুগিজ শিকারি। শঙ্কর তাকে সেবা–শুশ্রূষায় সুস্থ করে তোলে। কৃতজ্ঞতাস্বরূপ ডিয়েগো শঙ্করের অভিযানে তার গাইড হওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। ডিয়েগো ও শঙ্কর জিম কার্টার নামক এক আমেরিকানকে তাদের দলে ভেড়ায়। এই ত্রয়ী একসঙ্গে আফ্রিকার নিষিদ্ধ ও অজানা অঞ্চলের দিকে যাত্রা করে। যাত্রাপথ ছিল চরম বিপজ্জনক। কখনো সিংহ, বিষধর সাপ আবার কখনো জলহস্তী, গন্ডার ও হাতির আক্রমণ। অনেক কষ্ট ও সাহসিকতার সঙ্গে এসব বাধা অতিক্রম করতে থাকে। লক্ষ্য ছিল সেই রহস্যময় চাঁদের পাহাড় খুঁজে বের করা।

চট্টগ্রাম বন্ধুসভার হিরন্ময় কথকতা সিরিজ পাঠচক্রের নবম পর্ব
ছবি: বন্ধুসভা

অবশেষে তারা একটি পরিত্যক্ত সোনার খনির সন্ধান পায়, যা সম্ভবত চাঁদের পাহাড়েরই অংশ। কিন্তু এখানেই ঘটে এক মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। জিম কার্টার একটি গর্তে পড়ে মারাত্মকভাবে আহত হয় এবং মারা যায়। কিছুদিন পর ডিয়েগো আলভারেজও এক ভয়ানক জ্বরে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করে। শঙ্কর তখন সম্পূর্ণ একা ও হতাশ হয়ে পড়ে। সঙ্গীরা মারা গেছে, খাদ্য ও জল প্রায় শেষ হয়ে এসেছে। সে বুঝতে পারে, এই বিপৎসংকুল জঙ্গল থেকে বেঁচে ফিরে যাওয়াই এখন তার একমাত্র লক্ষ্য। অবশেষে সে নিদারুণ এক রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা ও হারিয়ে ফেলা বন্ধুদের স্মৃতি নিয়ে নিজ গন্তব্যে ফিরে আসে।

পাঠচক্রে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রবর্তক স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ মনোজ কুমার দেব। তিনি চট্টগ্রাম বন্ধুসভাকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ‘বর্তমানে শিক্ষার্থীরা শুধু একাডেমিক বই পড়ার পাশাপাশি ডিভাইসের দিকে বেশি মনোযোগী হয়ে পড়েছে, যা আসলেই বড় ধরনের সমস্যা। কিন্তু এই পাঠচক্রে শিক্ষার্থীরা বই আলোচনা শুনছে, নতুন কিছু জানছে ও শিখছে—এটি আসলেই বেশ প্রশংসনীয় উদ্যোগ। আমি চাই, চট্টগ্রাম বন্ধুসভা এই কার্যক্রমগুলো অব্যাহত রাখবে।’

পাঠচক্র সঞ্চালনা করেন চট্টগ্রাম বন্ধুসভার পাঠাগার ও পাঠচক্র সম্পাদক কামরান চৌধুরী। এতে উপস্থিত ছিলেন সাংগঠনিক সম্পাদক ইকবাল হোসেন, বইমেলা সম্পাদক শান্ত বড়ুয়া, প্রচার সম্পাদক সাকিব জিশান, কার্যনির্বাহী সদস্য জয় চক্রবর্তী, বন্ধু তৃষা বড়ুয়া, শারমিন ইসলাম, তানভীর মাহমুদ, তাফসিরুল ইসলাম ও রুবাঈদ আলম।

পাঠচক্র শেষে শিক্ষার্থীদের নিয়ে কুইজ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। বিজয়ীদের কিশোর আলো এবং সবাইকে চকলেট উপহার দেওয়া হয়।

পাঠাগার ও পাঠচক্র সম্পাদক, চট্টগ্রাম বন্ধুসভা