কবি নজরুল ইসলামের ‘সাম্যবাদী’ কাব্যগ্রন্থ নিয়ে পাঠচক্র

নোয়াখালী বন্ধুসভার পাঠচক্র।

আন্তর্জাতিক কবিতা দিবস উপলক্ষে পাঠচক্রের আসর করেছে নোয়াখালী বন্ধুসভা। ২১ মার্চ অনলাইন গুগল মিট অ্যাপে এটি অনুষ্ঠিত হয়। পাঠচক্রের বিষয় ছিল জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ‘সাম্যবাদী’ কাব্যগ্রন্থ ও বর্তমান পটভূমিতে এর প্রাসঙ্গিকতা।

পরিচয় পর্ব শেষে নতুন বন্ধু মোহাম্মদ শান্ত ‘মিথ্যাবাদী’ কবিতাটি আবৃত্তি করেন এবং কবিতা নিয়ে আলোচনা করেন। তিনি বলেন, এই কবিতায় কবি বুঝিয়েছেন, সমাজে আসলে মিথ্যাবাদীরাই পার পেয়ে যায়। পাঠচক্রের আসর সঞ্চালনা করেন পাঠাগার ও পাঠচক্র সম্পাদক শাহিদা রেশমি।

দপ্তর সম্পাদক নয়ন চন্দ্র কুরী ‘চোর–ডাকাত’ কবিতাটি আবৃত্তি করেন। বন্ধু মোহাম্মদ সুজন ‘ঈশ্বর’ কবিতাটি আবৃত্তি করেন এবং তিনি বলেন, ‘“ঈশ্বর” কবিতাটি “সাম্যবাদী” কাব্যগ্রন্থের প্রথম কবিতা। এই কবিতায় কবি বলতে চেয়েছেন, ঈশ্বর মানুষের মধ্যেই বিরাজমান। ঈশ্বর বা সৃষ্টিকর্তাকে আমরা চাইলেই মানুষের মধ্যেও খুঁজে পেতে পারি।’

সাংগঠনিক সম্পাদক সানি তামজীদ ‘সাম্যবাদী’ কবিতাটি আবৃত্তি করেন এবং তিনি বলেন, ‘সাম্যবাদী’ কবিতাটি কবি ১৯২৫ সালে রচনা করেন। এটি একই সঙ্গে নজরুল রচনাবলী গ্রন্থেও স্থান পেয়েছে। এই কবিতায় কবি মানুষে মানুষে সমতা বুঝিয়েছেন এবং মানব হৃদয়ই সবচেয়ে বড় ধর্ম।

বন্ধু তারফিনা শাহানাজ ‘নারী’ কবিতা নিয়ে আলোচনা করেন। তিনি বলেন, বর্তমানে নারীদের সঙ্গে যে সহিংসতা সংঘটিত হচ্ছে, এর প্রতিরোধে ‘নারী’ কবিতার গুরুত্ব অনেক বেশি।

নোয়াখালী বন্ধুসভার পাঠচক্র।

সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শিমুল ‘মানুষ’ কবিতাটি আবৃত্তি করেন এবং তিনি বলেন, এই কবিতায় কবি নিপীড়িত মানুষের ওপর ক্ষমতাশালী মানুষের অত্যাচার–অবিচার তুলে ধরেছেন, ক্ষুধার্ত মানুষের হাহাকার তুলে ধরেছেন। একই সঙ্গে যাঁরা ধর্ম নিয়ে ব্যবসা করেন, তাঁদের প্রতি প্রতিবাদী হয়ে উঠেছেন।

পাঠাগার ও পাঠচক্র সম্পাদক শাহিদা রেশমি ‘কুলি মজুর’ কবিতাটি আবৃত্তি করেন এবং তিনি বলেন, ‘উক্ত কবিতায় কবি বুঝিয়েছেন, শ্রমজীবী মানুষের পরিশ্রমের ফসল হিসেবে আমাদের এই আধুনিক সমাজ। কিন্তু শ্রমজীবী মানুষ তাঁদের প্রাপ্য সম্মানটুকু থেকে তো বঞ্চিত হচ্ছেন, সঙ্গে লাঞ্ছিত ও নিপীড়িত হচ্ছেন।’

উপদেষ্টা সুমন নুর বলেন, ‘সাম্যবাদী’ কাব্যগ্রন্থটি আজ থেকে প্রায় ১০০ বছর আগে প্রকাশিত হয়। তখনকার সামাজিক পটভূমি আর এখনকার সামাজিক পটভূমি ভিন্ন হলেও পরিবর্তন এতটা লক্ষ করা যায় না। তিনি আরও বলেন, ‘মানব হৃদয়ের চেয়ে বড় কোনো মসজিদ, মন্দির, কাবা ও প্যাগোডা নেই। মানুষের বিবেকই হলো আসল উপাসনালয়। সমাজে এখনো আমাদের বৈষম্যের জন্য লড়াই করতে হয়। আমরা সবাই সমাজকে সুন্দরভাবে গড়ে তোলার জন্য সোচ্চার হয়ে উঠব।’

সভাপতি উম্মে ফারহিন বলেন, ‘সাম্যবাদী’ কাব্যগ্রন্থের পরিপ্রেক্ষিতে দেখা যায়, মানুষ আসলে বহু বছরেও সভ্য হয়ে ওঠেনি।

পাঠচক্রে আরও উপস্থিত ছিলেন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তাজকির হোসেন, ধ্রুব ভূঁঞা, সাংগঠনিক সম্পাদক আরাফাত শিহাব, প্রচার সম্পাদক মালিহা তাসনিমসহ আরও অনেকে।

পাঠাগার ও পাঠচক্র সম্পাদক, নোয়াখালী বন্ধুসভা