ভৈরব বন্ধুসভার সঙ্গে জাতীয় পর্ষদের সাংগঠনিক সভা

ভৈরবের একটি রেস্টুরেন্টে ভৈরব বন্ধুসভার সঙ্গে জাতীয় পর্ষদের সাংগঠনিক সভা অনুষ্ঠিত হয়ছবি: বন্ধুসভা

দিনটি ছিল ৯ ফেব্রুয়ারি, শুক্রবার। ঘড়ির কাঁটায় ঠিক সকাল ৮টা বেজে ৫১ মিনিটে ফোনের রিংটোনের শব্দে ঘুম ভাঙল। হ্যালো বলতেই অপর প্রান্ত থেকে তাহসিন ভাই বললেন, ‘আপনি কি ঘুমাচ্ছেন? আমরা ভৈরব এসে আপনাদের সঙ্গে দেখা করব। সঙ্গে আছেন বন্ধুসভা জাতীয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি জাফর সাদিক ও সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ হোসেন মল্লিক ভাইসহ কয়েকজন।’ শুরুতে একটা ঘোরের মধ্যে ছিলাম, মনে হচ্ছিল স্বপ্ন দেখছি। তাহসিন ভাই আবার বললেন, ‘আমরা আর অল্প কিছুক্ষণ পর ভৈরব পৌঁছাব।’

সকাল সকাল আচমকা এত বড় খুশির খবর পেয়ে ঘুম তার দেশে ফিরে যেতে বাধ্য হলো। একলাফে উঠে যোগাযোগ করি আমার সাধারণ সম্পাদক মানিক আহমেদের সঙ্গে। সে খুশিতে আত্মহারা হয়ে বলেন, ‘আপু এক্ষুনি সবাইকে খবর দিচ্ছি, বন্ধুদের নিয়ে তাঁদের রিসিভ করতে যাচ্ছি।’ যে কথা সেই কাজ, সকাল সকাল আমরা ব্যস্ত হয়ে পড়ি জাতীয় পরিচালনা পর্ষদের বন্ধুদের উষ্ণ অভ্যর্থনা জানাতে। প্রথম আলো ভৈরব অফিসে গিয়ে গোছানো প্রায় শেষ করে আমি ও সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফ চলে যাই ফুলের দোকানে। কারণ, ২০২৪–২৫ কার্যকরী পর্ষদের নতুন নেতৃত্বের দুজনকে প্রথমবার ফুল দিয়ে বরণ না করলেই নয়। এর আগে বেশ কয়েকটি বন্ধুসভার সঙ্গে জাতীয় পরিচালনা পর্ষদ সাংগঠনিক সভা করেছে। অপেক্ষায় ছিলাম আমাদের সঙ্গে কখন হবে, সে অপেক্ষার প্রহর গুনতে হয়নি বেশি দিন। খবর পেয়ে বন্ধুরা ছুটে আসতে লাগলেন, তাঁদের উষ্ণ অভ্যর্থনা জানাতে। ফুল নিয়ে আমি আর সাইফ চললাম গন্তব্যে।

এর মধ্যেই ভৈরবে তাঁরা নামলেন। ভৈরব বন্ধুসভার সাধারণ সম্পাদক মানিক সবাইকে রিসিভ করলেন। জান্নাত রেস্টুরেন্টে বসে নাশতা ও চায়ের আড্ডায় এগিয়ে চলে সাংগঠনিক বৈঠক। ভৈরব বন্ধুসভার নানা আয়োজনগুলো নিয়ে কথা বলার একপর্যায়ে জাতীয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি জাফর সাদিক বলেন, ‘ভৈরবে বর্ষায় একটি আয়োজন করতে চাই, দিনব্যাপী।’

এটি শোনার পর খুশিতে আমাদের চোখ বর্ষার পানির মতোই টগবগ করছিল। ভালো লাগার বিষয় হলো বর্ষা ঋতুকে কেন্দ্র করে ভৈরব বন্ধুসভা দীর্ঘ সাত বছর ধরে বর্ষাদর্শন নামের একটি আয়োজন নিয়মিত করে আসছে।

সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ হোসেন মল্লিক বলেন, ‘আপনারা পরিকল্পনা শুরু করে দেন। আশপাশের বন্ধুসভার বন্ধুদের নিয়ে আমরা ভৈরবে বর্ষা উদ্‌যাপন করব। আয়োজক থাকবে ভৈরব বন্ধুসভা। থাকবে গ্রামীণ খেলা, যেমন হাঁড়ি ভাঙা, গোল্লাছুট, হাডুডুসহ নানা ধরনের ঐতিহ্যবাহী খেলা।’
‘আমি মেঘনার পাড়ে ছিপ নিয়ে মাছ ধরতে চাই, এটার ব্যবস্থা রাখবেন’, বললেন তাহসিন ভাই। তিনি ভৈরব বন্ধুসভার নিউজ নিয়েও বেশ প্রশংসা করেন।

ভৈরবের মাছের প্রশংসা করেন সবাই। গত বছর মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষাবিষয়ক কর্মশালার দুপুরের ভোজনের স্মৃতিচারণা করে শারমিন আরা তিশা আপু বলেন, ‘আমি আসব মাছ দিয়ে পালংশাকের ঝোল খেতে।’

ভৈরব বন্ধুসভার পক্ষ থেকে জাতীয় পরিচালনা পর্ষদকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানানো হয়
ছবি: বন্ধুসভা

প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক সুমন মোল্লা ভৈরব বন্ধুসভার সাংগঠনিক নানা দিক নিয়ে আলোচনা করেন। তাঁর মতে, একটি সংগঠন টিকিয়ে রাখতে হলে সব ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা প্রয়োজন, তা না হলে ছোট শহরে সংগঠনের গতি ধরে রাখা কঠিন। স্বচ্ছতার প্রশ্নে ভৈরব বন্ধুসভা সর্বদা এগিয়ে। নতুন নতুন উদ্যোগ আর স্বচ্ছতার জন্য এই জনপদে বন্ধুসভা এখন একটি মর্যাদা ও আস্থার নাম।

সবশেষে ভৈরব বন্ধুসভার পক্ষ থেকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানানো হয়। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন জাতীয় পরিচালনা পর্ষদের সাংগঠনিক সম্পাদক নেওয়াজুল মওলা, ঢাকা মহানগর বন্ধুসভার উপদেষ্টা শামসুদ্দোহা সাফায়াত, সহসভাপতি মাহমুদা বুশরা, সাধারণ সম্পাদক নাঈমা সুলতানা, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক শেখ কাব্য, ভৈরব বন্ধুসভার উপদেষ্টা সুমাইয়া হামিদ, সাবেক সাধারণ সম্পাদক ছিদরাতুল রশিদ, সাধারণ সম্পাদক মানিক আহমেদ, সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুর রহমান, মুক্তিযুদ্ধ ও গবেষণা সম্পাদক রাহিম আহমেদ, বন্ধু ইকরাম বখশ ও মাহমুদা তমা।

জাতীয় পরিচালনা পর্ষদ যাচ্ছিল সিলেট বইমেলায়। পথে বিরতিতে ভৈরব বন্ধুসভার সঙ্গে এই সময়টুকু সাংগঠনিক সাক্ষাৎ করে তাঁরা আবার যাত্রা শুরু করেন সিলেটের উদ্দেশে।

সভাপতি, ভৈরব বন্ধুসভা