৮০০০ চারা গাছ রোপণ করল ঠাকুরগাঁও বন্ধুসভা
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার ১৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন প্রজাতির ছয় হাজার গাছের চারা রোপণ ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিতরণ করেছে ঠাকুরগাঁও বন্ধুসভা। জেলা শহরের বিভিন্ন মাঠ, আশপাশের কবরস্থান, নদীর পাড় ও রাস্তার ধারে আরও ২ হাজার ৩২৯টি ফলদ, বনজ ও ঔষধি গাছের চারা রোপণ করা হয়। পাশাপাশি চারা গাছ পরিচর্যার ব্যবস্থাও করেন বন্ধুসভার বন্ধুরা।
‘আর নয় প্লাস্টিক দূষণ, জীবন বাঁচাতে বৃক্ষরোপণ’ প্রতিপাদ্যে গত ২৩ জুলাই থেকে শুরু হয় ঠাকুরগাঁও বন্ধুসভার মাসব্যাপী এই কর্মসূচি, চলে ২৫ আগস্ট পর্যন্ত। গাছের চারা দিয়ে সহযোগিতা করেছে ব্র্যাক মাইক্রোফাইন্যান্স, টিএমএসএস ও স্থানীয় মানুষেরা।
২৩ জুলাই সদর উপজেলার মুজামন্ডলহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিশুশিক্ষার্থীদের মধ্যে ২৭৫টি গাছের চারা বিতরণের মধ্য দিয়ে শুরু হয় কর্মসূচি। পর্যায়ক্রমে মাধবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ২১২টি, ঢোলার হাট মধুপুর কাকলি উচ্চবিদ্যালয়ে ৩৬৫টি, সি এম আইয়ুব বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে ৩৪৭টি, আর কে স্টেট উচ্চবিদ্যালয়ে ৪১৩টি, ইকো পাঠশালা অ্যান্ড কলেজে ২০০টি, ইসলামনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৪৭৮টি, খারুয়া ডাঙ্গা মাদ্রাসায় ২৩৪টি, মহাদেবপুর জলেশ্বরী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে ৬৫০টি, লক্ষ্মীপুর হাজিরহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৪২২টি, ইসলামনগর উচ্চবিদ্যালয়ে ৪৬৫টি, ঠাকুরগাঁও সুগার মিল উচ্চবিদ্যালয়ে ৪৭৫টি ও গিলাবাড়ী আদর্শ উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৯৫২টি গাছের চারা বিতরণ করা হয়।
চারা পেয়ে মুজামন্ডলহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা খুব খুশি। পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী শবনম আক্তার বলে, ‘আমি একটা লেবু ও একটা পেয়ারাগাছ পেয়েছি। গাছ দুটি বাড়ির উঠানে লাগাব। এরপর সেগুলো ঘিরে দিয়ে যত্ন নেব। যখন গাছে ফল ধরবে, তখন খুব মজা করে খাব।’
গিলাবাড়ি আদর্শ উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহজাহান ই হাবিব বলেন, ‘গাছের উপকারিতার কথা বলে শেষ করা যাবে না। গাছ আমাদের অক্সিজেন দিয়ে বাঁচিয়ে রেখেছে। আমরা প্রতিদিন যে পরিমাণ অক্সিজেন গ্রহণ করি, তা যদি নিজের লাগানো গাছ থেকে পাই, তাহলে কোনো দায় থাকে না। বন্ধুসভার এ উদ্যোগে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বাসযোগ্য সমাজ গড়ে তোলার সচেতনতা বাড়াবে। গাছ লাগানোর পাশাপাশি যত্ন নিয়ে, তারা প্রকৃতির প্রতি দায়িত্বশীল হতে শিখবে।’
দ্বিতীয় ধাপে সদর উপজেলার খড়িবাড়ী থেকে রাজাগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের দেড় কিলোমিটার রাস্তার দুই পাশে বিভিন্ন প্রজাতির ফলদ, বনজ ও ঔষধি গাছের ১ হাজার ২০০টি চারা রোপণ করেন বন্ধুরা। এ কাজে স্থানীয় মানুষেরা সহযোগিতা করেন। গাছগুলো খুঁটির সঙ্গে বেঁধে দেওয়ার পর রঙিন জাল দিয়ে ঘিরে দেওয়া হয়। চারা গাছে বন্ধুসভার ট্যাগও লাগিয়ে দেওয়া হয়।
এ ছাড়া ঠাকুরগাঁও সরকারি বালক উচ্চবিদ্যালয়ের বড় মাঠের সামনে ২৩১টি, শহরের মুন্সিপাড়া গোরস্তানে ২১৩টি, সুক নদীর পাড়ে ৪০০টি চারা রোপণ করা হয়। বন্ধুসভার বন্ধুদের মধ্যেও ২৮৫টি গাছ বিতরণ করা হয়। এসব গাছ তাঁরা নিজেদের বাড়িতে রোপণ করেন। এসব গাছের মধ্যে রয়েছে নিম, বহেড়া, আমলকী, লেবু, পেয়ারা, অর্জুন, পলাশ, হরীতকী ও কৃষ্ণচূড়াগাছ।
খড়িবাড়ী থেকে রাজাগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের রাস্তায় গাছ লাগানোর সময় সেই পথে যাচ্ছিলেন সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) খাইরুল ইসলাম। তিনি বন্ধুসভার এমন উদ্যোগের প্রশংসা করে বলেন, ‘বন্ধুসভা বরাবরই প্রশংসনীয় কাজ করে। এসব কাজের অংশীদার হতে পেরে ভালো লাগছে। বর্তমান বিশ্ব যেখানে জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশ সংকটে জর্জরিত, সেখানে এমন উদ্যোগ সমাজে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।’
ঠাকুরগাঁও বন্ধুসভার সভাপতি আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘শুধু গাছের চারা রোপণ করেই দায়িত্ব শেষ—এমনটি ভাবলে চলবে না। রোপণ করা এসব চারা পরিচর্যা ও রক্ষণাবেক্ষণ করাও আমাদের দায়িত্ব। এ কারণে আমরা গাছগুলোতে খুঁটি দেওয়ার ব্যবস্থা করেছি। পাশাপাশি জাল দিয়েও ঘিরে দিয়েছি। বন্ধুসভার সদস্যদের এসব গাছ নিয়মিত দেখভালের জন্য দল করে দেওয়া হয়েছে।’
মাসব্যাপী এ কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রাবেয়া হাসি, সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম, সহসাংগঠনিক সম্পাদক রাদ শাহামাদ, পরিবেশ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক মিথিলা আক্তার, স্বাস্থ্য ও ক্রীড়া সম্পাদক মারুফ হাসান, প্রশিক্ষণ সম্পাদক সিয়ামুর রশিদ, তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি সম্পাদক তপু রায়, প্রচার সম্পাদক এস এম আলিফ, মুক্তিযুদ্ধ ও গবেষণা সম্পাদক সিফাতুল সাদ, বন্ধু রুদ্র মহন্ত, সাজ্জাদ হোসেন, আল নাফিসসহ অন্যরা।
সাধারণ সম্পাদক, ঠাকুরগাঁও বন্ধুসভা