‘প্রথম আলো বাংলাদেশকে আলোকিত করেছে’

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির সপ্তম ছায়ামঞ্চে প্রথম আলোর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী অনুষ্ঠান শেষে বন্ধুসভার বন্ধু, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরাছবি: বন্ধুসভা

‘প্রথম আলো তার নাম দিয়েই পরিচয়টা দিয়ে দেয়। বাংলাদেশকে অন্ধকার থেকে আলোয় নিয়ে যেতে এ দৈনিকটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে। আমার কর্মজীবন থেকে দেখছি, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ রক্ষায়, সাম্প্রদায়িকতাকে রুখে দিতে প্রথম আলো যে ভূমিকা রেখেছে তা অনন্য। প্রথম আলো বাংলাদেশকে আলোকিত করেছে। বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। যে লক্ষ্যে অসংখ্য শিশু ও তরুণ আত্মদান দিয়ে গেছে, সেই লক্ষ্য ও স্বপ্নে দেশকে এগিয়ে নিতে প্রথম আলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি।’

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম আলোর ২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক সোহেল আহমেদ। ৯ নভেম্বর বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির সপ্তম ছায়ামঞ্চে এটির আয়োজন করে জাবি বন্ধুসভা।

জাতীয় সংগীত পরিবেশনের পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। মূল আকর্ষণ হিসেবে ছিল সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের শিক্ষা পাঠদান পরিচালনাভিত্তিক সংগঠন ‘তরী’-এর অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী। তারা দেশাত্মবোধক গান, কবিতা আবৃত্তি এবং নৃত্য পরিবেশন করে।

জাবি বন্ধুসভার সহসভাপতি তাবাসসুম রিচিকা ও বন্ধু আনোয়ার হোসেনের সঞ্চালনায় আলোচনা পর্বে বক্তব্য দেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের নেতারা।

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন যখন থেমে যাচ্ছিল, তখন প্রথম আলোর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার জন্য সারা দেশে আবার আন্দোলন জেগে উঠেছিল উল্লেখ করে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক শামছুল আলম বলেন, ‘বাংলাদেশের রাজনীতি, অর্থনীতি, সামাজিক—সব ক্ষেত্রেই প্রথম আলোর একটি ইতিবাচক ভূমিকা রয়েছে। বিশেষ করে তারা যে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও আন্তর্জাতিক নিবন্ধগুলো প্রকাশ করে থাকে, আমরা তা গুরুত্বের সঙ্গে অধ্যায়ন করে থাকি। যেগুলো আমাদের অনেক উপকারে আসে।’

জাতীয় সংগীত পরিবেশনের পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়
ছবি: বন্ধুসভা

‘আন্দোলনের সময় যখন ৯ দফা ঘোষণা করা হয়েছিল, তখন গোয়েন্দা সংস্থা অনেক তৎপর ছিল, যাতে সেটি গণমাধ্যমে প্রকাশিত না হয়। কিন্তু প্রথম আলো সাহস করে সেটি প্রকাশ করেছিল। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরা ছাত্র-শিক্ষকেরা যেদিন মুখে লাল কাপড় বেঁধে আন্দোলন করেছিলাম, সেদিন প্রথম আলো গুরুত্বসহকার সেটি প্রকাশ করেছিল। সেটিও সারা বাংলাদেশে প্রভাব ফেলেছে। এ জন্য আমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি। আন্দোলনের সময় কোথায় কী ঘটছে, তার অনেক ছবিও প্রকাশ করেছিল। অন্যান্য ক্ষেত্রেও তারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। প্রথম আলোর এই অবদানকে অবশ্যই স্মরণীয় রাখতে হবে। আশা করি, প্রথম আলো এই ভূমিকা অব্যাহত রাখবে।’

পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক জামাল উদ্দিন বলেন, ‘বস্তুনিষ্ঠতা ও বিশ্বাসযোগ্যতার জায়গা থেকে প্রথম আলো দেশের সব সংবাদমাধ্যমের মধ্যে একটি বহুল প্রচারিত ও আলোচিত পত্রিকা। এই পত্রিকা ব্যাপকভাবে আমাদের সমাজ ও রাজনৈতিক জীবনকে নাড়া দেয়। জুলাই হত্যাকাণ্ড ও গণ-অভ্যুত্থানের পরবর্তী সময়ে যে রাষ্ট্রব্যবস্থা পেয়েছি, যেখানে আমরা মুক্ত ও স্বাধীনভাবে কথা বলার সুযোগ পাচ্ছি। সে ক্ষেত্রে প্রথম আলো জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের যে ছবি, ভিডিও ফুটেজ ও সংবাদ করেছিল, জাতীয় পর্যায়ে সেটি বড় ধরনের ভূমিকা রেখেছে।’

‘গণ–আন্দোলনের সময় যেদিন কেন্দ্রীয় ছয় সমন্বয়ককে জোর করে ডিবি অফিসে আটকে রেখে আন্দোলন প্রত্যাহার করার ঘোষণা দেওয়া হলো, পরের দিনের কর্মসূচি নিয়ে যখন সারা বাংলাদেশে একটা অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল, তখন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে চারজন শিক্ষকসহ এক থেকে দেড় শ শিক্ষার্থী মিলে যে মিছিলটি হয়, সেটি প্রথম আলোর অনলাইনে প্রকাশিত হয়। ওই দিন সন্ধ্যায় সারা বাংলাদেশে আবারও আন্দোলনের দাবানল ছড়িয়ে পড়ে। আশা করছি, প্রথম আলোর এ ধরনের প্রোগ্রামগুলো সমাজের মধ্যে যেভাবে প্রভাব ফেলেছে, তেমনিভাবে দায়িত্বশীলতার জায়গা থেকে আরও দায়িত্ব পালন করবে।’

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুল আহসান বলেন, ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে কোমলমতি শিশুদের হাত ধরে আমরা তরী পার হয়েছিলাম। গণ-অভ্যুত্থানের পর আমাদের পথ দেখিয়েছে যে শিশুরা, তাদের দেখানো পথ যেন আমরা হারিয়ে না ফেলি। প্রথম আলোর প্রতি কৃতজ্ঞতা, যে মুনশিয়ানা নিয়ে তারা পথ হাঁটছে সেটা অব্যাহত থাকবে। সব সমালোচনা ধৈর্যের সঙ্গে মোকাবিলা করতে হবে, তবেই তো সবাইকে পথ দেখানো যাবে। সমালোচনাতে ভয় নেই। যারা সমালোচনা নিতে পারে না তারা সৃষ্টি করতে পারে না। আমি বিশ্বাস করি, প্রথম আলো সেই ধৈর্যের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে সব সময় দেশকে পথ দেখিয়ে যাবে। সার্বভৌমত্ব এবং ’২৪-এর গণ-অভ্যুত্থানের অঙ্গীকার প্রতিষ্ঠায় প্রথম আলো আমাদের সহযাত্রী।’

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক আব্দুর রব, ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক গোলাম রব্বানী, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জাবি শাখার সমন্বয়ক তৌহিদ সিয়াম, জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি শরন এহসান, ছাত্রফ্রন্ট জাবি শাখার সংগঠক সোহাগী সামিয়া, তরীর সাধারণ সম্পাদক রিছান উদ্দিন, জাবি বন্ধুসভার সভাপতি সুমাইয়া জামান প্রমুখ।