পরিশ্রম ও স্বেচ্ছাসেবার মধ্য দিয়েই নিজেকে প্রস্তুত করতে হবে

সৈয়দপুর, নীলফামারী, দিনাজপুর, রংপুর এবং হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধুসভার সঙ্গে জাতীয় পর্ষদের সাংগঠনিক সভা
ছবি: সংগৃহীত

কয়েক দিন আগে জাতীয় পর্ষদের সহসভাপতি রুবাইয়াত সাইমুম চৌধুরী এবং সাবেক সভাপতি উত্তম রয়ের সঙ্গে দেখা হয় সৈয়দপুর ও নীলফামারী বন্ধুসভার বন্ধুদের। কিন্তু কাছাকাছি দূরত্বে থাকা দিনাজপুর, রংপুর এবং হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধুসভার সঙ্গে এ বছর সশরীরে কোনো সভার আয়োজন করা হয়নি। অবশেষে সেই আক্ষেপ ঘোচাতেই জাতীয় পর্ষদের সভাপতি জাফর সাদিক ছুটে যান সৈয়দপুর।

বন্ধুরাও অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় ছিলেন, উন্মুখ হয়ে ছিলেন বৈঠকে অংশ নিতে। ২৪ মে বিকেলে এ পাঁচটি বন্ধুসভার অর্ধশতাধিক বন্ধুর অংশগ্রহণে সভা শুরু হয়। সভার শুরুতেই সবার সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন জাফর সাদিক। এরপর একে একে প্রতিটি বন্ধুসভার সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ অন্য সদস্যদের কথা শোনেন তিনি।

প্রথমেই সৈয়দপুর বন্ধুসভার সভাপতি বিলকিস আক্তার বছরজুড়ে তাঁদের কাজের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দিয়ে জানান, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন হিসেবে তাঁরা চেষ্টা করছেন ভালো কিছু করার। কিন্তু নিজস্ব অফিস না থাকায় বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাঠে কিংবা কক্ষে বসে সাংগঠনিক সভা করতে হয়। এ ছাড়া তিনি সৈয়দপুরে বন্ধুসভার কাজ করতে গিয়ে যেসব অভিঘাতের মুখোমুখি হন, সেসব বিষয়ে বিস্তারিত জানান এবং সমাধান প্রত্যাশা করেন।

দিনাজপুর বন্ধুসভার সাধারণ সম্পাদক সুদর্শন চন্দ্র অধিকারী তাঁদের আগের বছরের কাজের ধারাবাহিকতায় বর্তমানেও কাজ করার চেষ্টা করছেন বলে জানান। তিনি কাজ করার ক্ষেত্রে ৫ আগস্ট–পরবর্তী বাস্তবতায় উদ্ভূত বিভিন্ন সমস্যার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। পাশাপাশি সংগঠনের সদস্যদের জন্য ন্যূনতম যে মাসিক চাঁদা নির্ধারণ করা হয়েছে, সে বিষয়ে মত ব্যক্ত করেন। এ ছাড়া বন্ধুসভার অনুষ্ঠান আয়োজনে আর্থিক সহায়তা প্রসঙ্গে আলোচনা করেন।

নীলফামারী বন্ধুসভার সভাপতি রুবি আক্তার তাঁদের কাজের অগ্রগতি ও প্রস্তুতি সম্পর্কে জানিয়ে, জাতীয় পর্ষদের পক্ষ থেকে নিয়মিত ফোন কিংবা খুদে বার্তার মাধ্যমে যোগাযোগের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে গুরুত্ব দেন। এতে বন্ধুদের মনোবল চাঙা হয় বলে তিনি মন্তব্য করেন। এ সময় স্থানীয় বন্ধুসভার সঙ্গে যোগাযোগের জন্য বিভাগীয় সমন্বয়ক নির্ধারণের জন্য জরুরি তাগাদা দেন তিনি।

সাংগঠনিক সভায় উপস্থিত ছিলেন বন্ধুসভা জাতীয় পর্ষদের সভাপতি জাফর সাদিক।

রংপুর বন্ধুসভার পক্ষ থেকেও তাদের কাজের বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হয়। সার্বিকভাবে তাদের কাজের পবিবেশ আগের মতোই ইতিবাচক আছে বলে জানান বন্ধুরা। তবে রংপুর বন্ধুসভার সদস্য বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, তাঁরা রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে বন্ধুসভার আলাদা ইউনিট করতে চান। এ বিষয়ে কেন্দ্রের মত জানতে চান।

সবশেষে দিনাজপুরের হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধুসভার পক্ষ থেকে জানানো হয়, ৫ আগস্টের পর তারা স্বেচ্ছাসেবী কার্যক্রম পরিচালনা করতে খানিকটা অসুবিধার সম্মুখীন হচ্ছে। বিশেষ করে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনায় কিছুটা বেগ পেতে হচ্ছে। এর মধ্যেও তারা প্রথমার সঙ্গে যৌথভাবে বইমেলার আয়োজন করেছে। ভবিষ্যতে কীভাবে আরও ভালো করে কাজ করা যায় সে বিষয়ে পরামর্শ চান বন্ধুরা।

সবগুলো বন্ধুসভার কথা শোনার পর শুরুতেই অনুষ্ঠান আয়োজনে কীভাবে স্পনসরের ব্যবস্থা করা যায়, সে বিষয়ে কথা বলেন ঢাকা মহানগর বন্ধুসভার প্রশিক্ষণ সম্পাদক গিয়াসউদ্দীন মুন্না। তিনি স্পনসর ব্যবস্থাপনা ও আবেদনের বিভিন্ন দিক নিয়ে কথা বলেন। পাশাপাশি স্পনসর পেতে গেলে কী করতে হবে, সে বিষয়ে কথা বলেন।

জাতীয় পর্ষদের সভাপতি জাফর সাদিক প্রতিটি বন্ধুসভাকে তাদের চমৎকার সব কাজের জন্য আলাদা করে বিশেষ ধন্যবাদ জানান। তিনি বন্ধুসভার লক্ষ্য, উদ্দেশ্য ও কাজের ধরন বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করে স্বেচ্ছাসেবার চ্যালেঞ্জগুলো সম্পর্কে বন্ধুদের অবগত করেন। জাফর সাদিক বলেন, ‘যেখানে দেশের বাইরের বিভিন্ন দেশ নিজেদের অর্থায়নে স্বেচ্ছাসেবায় যুক্ত হওয়ার জন্য উন্মুখ থাকে, সেখানে আপনারা বন্ধুসভার প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে খুব চমৎকারভাবে সারা দেশে স্বেচ্ছাসেবী কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। এটি আপনাদের নেতৃত্ব দক্ষতা, সহনশীলতা, সামাজিক মর্যাদা যেমন বৃদ্ধি করছে, তেমনি ভবিষ্যৎ কর্মজীবনের জন্য আপনাদের প্রস্তুত করছে। যাঁরা স্বেচ্ছাসেবায় কাজ করেন না, তাঁদের চেয়ে আপনারা অনেক এগিয়ে আছেন, যা কর্মজীবনসহ আপনাদের ভবিষ্যৎ যাত্রায় আরও ভালোভাবে বুঝতে পারবেন।’

জাফর সাদিক বন্ধুসভার প্ল্যাটফর্মে কাজ করার মাধ্যমে আত্মোন্নয়ন ও নিজেদের ভবিষ্যতের জন্য ইতিবাচক কিছু গ্রহণ করার তাগিদ দেন। পাশাপাশি উচ্চশিক্ষা, দেশ-বিদেশে বৃত্তিলাভ কিংবা চাকরির জন্য প্রয়োজনে বন্ধুসভার পক্ষ থেকে প্রত্যয়নপত্র গ্রহণ করার জন্য সুযোগ নেওয়ার আহ্বান জানান।

সাম্প্রতিক সামাজিক বাস্তবতায় বন্ধুরা বাইরের যেসব চাপ অনুভব করছেন, সেগুলো মাথায় রেখেই স্বেচ্ছাসেবা এবং দেশের উন্নয়নে কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন জাফর সাদিক। নিজেদের ভালো কাজের মধ্য দিয়ে এসব সাময়িক বিরূপ চাপ দ্রুতই কেটে যাবে—এমন প্রত্যাশা জানান। বন্ধুসভাগুলোকে তিনি জুলাই অভ্যুত্থান বিষয়ে ইতিবাচক বিভিন্ন কর্মসূচি দেওয়ার আহ্বান জানান। বিশেষ করে জুলাই অভ্যুত্থান নিয়ে চিত্র প্রদর্শনী, চিত্রাঙ্কনসহ আলোচনা সভা আয়োজনে বন্ধুদের উৎসাহিত করেন। নিজেদের উন্নয়নে বিভিন্ন বিষয়ভিত্তিক অনলাইন-অফলাইন কর্মশালা ও সেমিনার আয়োজনের জন্য আহ্বান জানান, যেখানে জাতীয় পর্ষদ তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী সর্বোচ্চ সহায়তা করবে।

সৈয়দপুর, নীলফামারী, দিনাজপুর, রংপুর এবং হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধুসভার সঙ্গে জাতীয় পর্ষদের সাংগঠনিক সভা
ছবি: সংগৃহীত

জাতীয় পর্ষদের আহ্বানে নিয়মিত কর্মসূচিগুলোতে অংশগ্রহণের জন্য বিশেষভাবে তাগিদ দেন পর্ষদের সভাপতি জাফর সাদিক। তিনি বলেন, বন্ধুর গান প্রতিযোগিতা, লেখক বন্ধু কর্মশালায় অংশগ্রহণসহ বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি, পাঠচক্র, নিয়মিত মাসিক সভা আয়োজন করতে হবে। এ ছাড়া কর্মসূচি আয়োজনে অর্থ সংগ্রহ ও ব্যবস্থাপনায় আরও কৌশলী হয়ে কর্মসূচি অনুযায়ী ভিন্ন ভিন্ন স্পনসর সংগ্রহের গুরুত্ব দেন তিনি। বন্ধুদের আরও সমন্বিতভাবে ইতিবাচক কাজ করার পরামর্শ দেন। স্থানীয় বন্ধুসভাগুলোর সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে জাতীয় পর্ষদের পক্ষ থেকে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষার প্রতিশ্রুতি দেন। এ বছরের ডিসেম্বর নাগাদ সারা দেশের বন্ধুদের নিয়ে জাতীয় বন্ধু সমাবেশ আয়োজনের প্রত্যয় পুনর্ব্যক্ত করেন তিনি।

সভা শেষে কথা বলেন প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক ফিরোজ চৌধুরী। তিনি বন্ধুসভার ভূয়সী প্রশংসা করে বলেন, ‘বন্ধুসভার কাজের ধরন পরিবর্তন হওয়ায় অনেকেই হয়তো এখনো সবকিছু বুঝে উঠতে পারছেন না। তবে খুব দ্রুতই তাঁরা পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নেবেন।’ প্রথম আলো ও প্ল্যান ইন্টারন্যাশনালের আয়োজনে শিগগিরই দিনাজপুর বা রংপুরে বন্ধুদের অংশগ্রহণে আরেকটি যুব সমাবেশ আয়োজনের পরিকল্পনার কথাও জানান তিনি।

সভায় উল্লিখিত পাঁচটি বন্ধুসভার কার্যনির্বাহী পর্ষদের সদস্যসহ বিভিন্ন স্তরের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

প্রচার সম্পাদক, ঢাকা মহানগর বন্ধুসভা