ভ্যান চালিয়ে সংসারের খরচ নির্বাহ করতেন ওমর ফারুক (৩৩)। সেই রোজগারের পথ কয়েকমাস ধরে বন্ধ। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে এখন শয্যাশায়ী। চিকিৎসা–সহায়তা দিয়ে তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছে রংপুর বন্ধুসভা।
রংপুর নগরীর ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের শেখপাড়ায় ওমর ফারুকের বাড়ি। সংসারে স্ত্রী ও দুই সন্তান রয়েছে। ছেলে প্রথম শ্রেণিতে পড়ছে। মেয়ের বয়স আড়াই বছর। ভ্যান চালিয়ে যা আয় হতো, তা দিয়েই চলত সংসার। চিকিৎসার খরচ চালাতে ধারদেনাও হয়েছে অনেক। বাড়িতে লালনপালন করা একটি গরু ও ভ্যানটি ইতিমধ্যে বিক্রি করেছেন।
এমন অবস্থায় বন্ধুসভার বন্ধুরা তাঁর বাড়িতে ছুটে যান। কিছু আর্থিক সহায়তা প্রদান করেন। প্রয়োজনে আরও দেওয়া হবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এ সময় সঙ্গে ছিলেন বন্ধুসভার সাধারণ সম্পাদক সংগীতা দাস, বন্ধু আওরঙ্গজেব, সৌমিত্র বর্মন, দীপ্ত তালুকদার ও সোহাগ কুমার।
সাধারণ সম্পাদক সংগীতা দাস বলেন, ‘গুলিতে আহত ওমর ফারুকের চিকিৎসাসেবার জন্য ওষুধের পেছনে অনেক খরচ। হতদরিদ্র এই পরিবারে রোজগারের কেউ নেই। পরিবারটির কষ্টলাঘবে আর্থিক সহায়তায় বন্ধুসভা তাঁর পাশে থাকবে।’
ওমর ফারুকের স্ত্রী জোহরা বেগম প্রথম আলো বন্ধুসভার আর্থিক সহায়তার প্রশংসা করে বলেন, ‘আল্লাহ আপনাদের ভালো করুক। এই টাকা ওষুধের পেছনে খরচ করা হইবে। এর আগোত গরু ও ভ্যান গাড়ি বিক্রি করছি।’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় গত ১৮ জুলাই বিকেলে রংপুর শহরের মডার্ণ মোড়ের অদূরে ঢাকা-রংপুর মহাসড়কের ফাতেমা হিমাগারের কাছে ভ্যান মেরামত করছিলেন ওমর ফারুক। এমন সময় মডার্ণ মোড়ে আন্দোলনরত বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ বাধে। তাৎক্ষণিক পুলিশের গুলিতে ওমর ফারুক মাটিতে লুটে পড়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। কিছু বলতে পারেন না। জ্ঞান ফিরে দেখেন তিনি হাসপাতালে।
রংপুর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আবদুল বাছেদ বলেন, ‘ফারুকের নাভির নিচে গুলি লেগে পেছন দিক দিয়ে বেরিয়ে যায়। একবার অস্ত্রোপচার হয়েছে। ক্ষতস্থান শুকালে আরও একবার অস্ত্রোপচার করতে হবে। ২৬ দিন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। এখন তাঁর প্রয়োজন ওষুধ। আশা করি, তিনি সুস্থ হয়ে উঠবেন। আগের মতোই চলাফেরা করতে পারবেন।’
বন্ধু, রংপুর বন্ধুসভা