‘কম্বলটা গাওত দিলে বেশ আরাম লাগিবে’

দিনাজপুরে বন্ধুদের দেওয়া কম্বল হাতে শীতার্তরা
ছবি: বন্ধুসভা

‘দিনত ভালোয় রোদ, কিন্তু রাইত বাহে খুবে ঠান্ডা। নদীর পাড়ের বাতাসে হাড় কাঁপি ওঠে। কম্বলটা গাওত দিলে বেশ আরাম লাগিবে।’ দিনাজপুর বন্ধুসভার শীতবস্ত্র বিতরণ কর্মসূচিতে এসে এভাবেই অনুভূতি ব্যক্ত করেন রাজেন চন্দ্র (৬০)।

পৌষ ও মাঘ মাস মিলে শীতকাল হলেও এ দেশে শীতের রেশ থেকে যায় লম্বা সময় পর্যন্ত। ভৌগোলিক অবস্থানে হিমালয় পর্বতের নিকটবর্তী হওয়ায় ঠান্ডার প্রকোপ উত্তরাঞ্চলে খানিকটা বেশি। প্রতিবছর শীতকালে শৈত্যপ্রবাহ ও হাড়কাঁপানো ঠান্ডা চিরচেনা ঘটনা উত্তরের জেলাগুলোয়। ভোগান্তি বাড়ে সাধারণ মানুষের। সেই ভোগান্তির রেশ কমাতে ২৬ ডিসেম্বর শীতার্তদের মধ্যে কম্বল বিতরণ করেছেন বন্ধুরা।

এদিন বেলা ১১টায় প্রথম আলো ট্রাস্টের উদ্যোগে দিনাজপুরের কাহারোল উপজেলার পরবেশপুর আশ্রমপাড়ায় শীতবস্ত্র হিসেবে কম্বল বিতরণ করা হয়। শীতার্তদের মধ্যে ছিল বিভিন্ন বয়সী আড়াই শতাধিক নারী ও পুরুষ।

উপহার পেয়ে দুই বন্ধুকে আশির্বাদ দিচ্ছেন এক বৃদ্ধা
ছবি: বন্ধুসভা

শীতার্তদের উদ্দেশে প্রথম আলোর প্রতিনিধি শৈশব রাজু বলেন, ‘প্রথম আলোর পক্ষ থেকে আমরা প্রতিবছর বিভিন্ন জায়গায় শীতের উপহার দিয়ে থাকি। এবারে আপনাদের জন্য এই সামান্য উপহার। খুব বেশি কিছু না হলেও শীতের রাতে এই একটা কম্বল আপনাদের বেশ আরাম দেবে। রাতের ঘুমটা অন্তত ভালো হবে।’

আগের দিন বিকেলে স্থানীয় বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সহযোগিতায় পরিদর্শন করা হয় গ্রামটি। খুঁজে বের করা হয় দুস্থ মানুষগুলোকে। শীতের উপহার পেয়ে ৬০ বছর বয়সী উষা রানী বলেন, ‘খুব ভালো লাগিছে। তোমরাহ হামার খুব উপকার করিলেন। তোমাক ধইন্যবাদ।’ পরবেস চন্দ্র রায় বলেন, ‘উপহার পায়া মনটা খুশি হয়া গেল।’

বয়োজ্যেষ্ঠদের ভিড়ে পেছনে দাঁড়িয়ে উপহার না পেয়ে কাঁদতে দেখা যায় ৬ বছর বয়সী তীর্থকে। মা কাজে গিয়েছে, তাই মায়ের টোকেন হাতে নিতে আসে উপহার। কিন্তু বড়দের ভিড়ে সামনে আসার সাহস না পেয়ে দূরে দাঁড়িয়ে কাঁদতে থাকে। বন্ধুসভার বন্ধুরা কাছে গেলে টোকেন এগিয়ে দিয়ে সে জানায়, সবুজ রঙের কম্বল নেবে। সবুজ তার খুব প্রিয়।

কর্মসূচি শেষে দিনাজপুর বন্ধুসভার বন্ধুরা
ছবি: বন্ধুসভা

লাঠিতে ভর দিয়ে অন্য একজনের সহায়তায় উপহার নিতে আসেন কৌশল্যা বালা। বয়স ৮০ ছাড়িয়েছে। একা আর চলতে পারেন না। পরমেশপুর আশ্রমের প্রবীণ সদস্যদের একজন তিনি। শীতবস্ত্র পেয়ে হাতজোড় করে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করে বলেন, ‘কম্বল পায়া খুব ভালো লাগিল। তোমরা অনেক বড় হও। আশীর্বাদ দিনু।’

দিনাজপুর বন্ধুসভার সভাপতি মুনিরা শাহনাজ চৌধুরী বলেন, ‘শীতের এই উপহার প্রথম আলোর একটি ধারাবাহিক আয়োজন। আশা করছি এই উপহার আপনাদের কাছে ভালো লেগেছে। আপনাদের কাছে উপহারগুলো পৌঁছে দিতে পেরে আমরাও আনন্দিত। কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি প্রথম আলো ট্রাস্ট, আমাদের শুভাকাঙ্ক্ষী ও দিনাজপুর বন্ধুসভার বন্ধুদের, যারা নিরলস শ্রম দিয়েছে।’

আয়োজনে আরও উপস্থিত ছিলেন সহসভাপতি সাব্বির হাসান, দপ্তর সম্পাদক বেলালুর রহমান, পাঠাগার ও পাঠচক্র সম্পাদক আরিয়ানা চৌধুরী, অর্থ সম্পাদক সাদিয়া আফরোজ, দুর্যোগ ও ত্রাণবিষয়ক সম্পাদক খেয়া রানী রায়, বন্ধু রাকিব ইসলাম, অনুপ রায়, মনোরঞ্জন, শুভজিৎ, স্বর্ণা, ব্রততী, কৃষ্ণ, সুমন্ত প্রমুখ।

সাধারণ সম্পাদক, দিনাজপুর বন্ধুসভা