শিক্ষার্থীদের গণিত জয়ের মন্ত্রপাঠ

গাজীপুরে অনুষ্ঠিত হলো ডাচ্–বাংলা ব্যাংক-প্রথম আলো ২৩তম আঞ্চলিক গণিত উৎসবছবি: বন্ধুসভা

মধ্য জানুয়ারির শীতের সকাল হলেও মাঘের ঠান্ডা যেন অতটা জমেনি। তবে এই সাতসকালেই গণিতপ্রেমী শিক্ষার্থীদের পদচারণে মুখর হয়ে ওঠে উৎসব প্রাঙ্গণ। অনেকেই অভিভাবকদের সঙ্গে করে নিয়ে এসেছে। সবার মনে গণিতভীতি কাটিয়ে ওঠার প্রত্যয়। প্রতিযোগিতায় জেতার চেয়ে অংশগ্রহণকে যেন গৌরবময় মনে করছে প্রাণোচ্ছ্বল শিক্ষার্থীরা। এ যেন যথার্থই শিক্ষার্থীদের গণিত জয়ের মন্ত্রপাঠ।

১৮ জানুয়ারি সকাল ১০টায় গাজীপুর শহরের ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট উচ্চবিদ্যালয় মাঠে সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় গণিত উৎসব। উত্তোলন করা হয় জাতীয় পতাকা, বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড ও আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডের পতাকা। জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি কলেজের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক অসীম বিভাকর, আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডের পতাকা উত্তোলন করেন বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক বি এম মইনুল হোসেন ও ডাচ্–বাংলা ব্যাংকের পতাকা উত্তোলন করেন জয়দেবপুর শাখার ব্যবস্থাপক (পাবলিক রিলেশন) মোহাম্মদ শাহিন আলম।

গাজীপুরে অনুষ্ঠিত হলো ডাচ্–বাংলা ব্যাংক-প্রথম আলো ২৩তম আঞ্চলিক গণিত উৎসব
ছবি: বন্ধুসভা

অধ্যাপক অসীম বিভাকর বলেন, ‘প্রকৃতিও একটি গাণিতিক নিয়ম অনুসরণ করে চলে। যেমন ভূভাগের ২৫ শতাংশ বনভূমি থাকা উচিত; কিন্তু সেই বনভূমিকে আমরা নামিয়ে এখন ৪ শতাংশে নিয়ে এসেছি। ফলে প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হয়ে গিয়েছে। ফলে কার্বন ডাই-অক্সাইড যে পরিমাণে উৎপন্ন হচ্ছে, সেটি গ্রহণ করতে পারছে না। প্রকৃতির গণিতকে যদি আমরা অনুসরণ করতাম, তাহলে আজকে এই বিপর্যয় হতো না। তাই জীবনের সব ক্ষেত্রে আমাদের গাণিতিক নিয়মকে মেনে চলতে হবে। তবেই আমরা এগিয়ে যাব।’

গাজীপুর সরকারি মহিলা কলেজের সহযোগী অধ্যাপক আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে গণিতের প্রয়োজন রয়েছে। গণিতকে ভয় পেলে চলবে না। গণিতকে জয় করতে হবে।’

গাজীপুর বন্ধুসভার বন্ধুরা
ছবি: বন্ধুসভা

লেখক ও সাংবাদিক ফারদিন ফেরদৌস বলেন, ‘প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটি আয়োজিত গণিত উৎসব শিক্ষার্থীদের গণিতের নিগূঢ় দর্শনের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়। শূন্য সংখ্যাটি যেমন জীবনকে মনে করিয়ে দেয় যে কিছু না থাকাটাও গুরুত্বপূর্ণ। এটি আমাদের একটি নিরপেক্ষ অবস্থায় নিয়ে যায়; যেখানে নতুন শুরু, ভারসাম্য ও অসীম সম্ভাবনা জড়িয়ে থাকে। গণিত উৎসবে অংশগ্রহণকারীরাও এই শূন্যের পাঠ থেকে মহৎ জীবনবোধ আত্মস্থ করে।’

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট উচ্চবিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক জহিরুল ইসলাম, প্রথম আলোর গাজীপুর প্রতিনিধি মাসুদ রানা। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন গাজীপুর বন্ধুসভার সভাপতি বাবুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক আরিফ হোসেন।

সকাল ১০টা ২০ মিনিটে বিদ্যালয়ের ছয়টি কক্ষে একযোগে শুরু হয় লিখিত পরীক্ষা। এক ঘণ্টার পরীক্ষা শেষে প্রতিষ্ঠানের মিলনায়তনে চলে সাংস্কৃতিক ও শিক্ষার্থীদের প্রশ্নোত্তর পর্ব। অন্যদিকে পরীক্ষার্থীদের খাতা দেখে ফলাফল নির্ণয়ের কাজ চলমান থাকে। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের সঞ্চালনা করেন গাজীপুর বন্ধুসভার বন্ধু ইমদাদুল ইসলাম ও শামছুন্নাহার মীম।

জাতীয় পর্যায়ের জন্য নির্বাচিত শিক্ষার্থীরা
ছবি: বন্ধুসভা

গণিত উৎসবে অংশ নিয়ে উচ্ছ্বসিত ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী অনির্বাণ ভৌমিক। তার অনুভূতি জানাতে গিয়ে বলে, ‘গণিতের প্রতি আমার বেশি আগ্রহ। তাই তিন বছর ধরে গণিতের এই পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে আসছি। আমার সঙ্গে মা–বাবাও এসেছেন। তাঁরাও চান আমি যেন অঙ্কে ভালো করি।’

গণিত উৎসবকে কেন্দ্র করে স্কুল মাঠে বসে প্রথমা প্রকাশনীর স্টল। প্রতিটি স্টলেই শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের ভিড় দেখা গেছে। তাঁরা বইয়ের স্টলগুলো ঘুরে দেখেন। অনেকে নিজের পছন্দের বই কেনেন।

‘গণিত শেখো, স্বপ্ন দেখো’ স্লোগানে ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের পৃষ্ঠপোষকতায় ও প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনায় গণিত উৎসবের এ আয়োজন করেছে বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটি। আয়োজনে সহযোগিতা করেন গাজীপুর বন্ধুসভার বন্ধুরা। অনলাইনে প্রাথমিক বাছাইপর্বে নির্বাচিত ৪৮০ জন শিক্ষার্থী উৎসবে যোগ দেয়। বিভিন্ন শ্রেণিতে ২৭ জনকে নির্বাচিত করা হয়।