দেশপ্রেম, নেতৃত্ব, সেবা ও বন্ধুত্বের গৌরবময় দুই যুগ

সারা দেশে লক্ষাধিক তরুণ-তরুণীর স্বেচ্ছাসেবায় আত্মনিয়োগ শুধু অভূতপূর্বই নয়, বরং আশাজাগানিয়াও বটে! সেসব তরুণ তুর্কির এক অনন্য প্ল্যাটফর্ম বন্ধুসভা। প্রথম আলোর পাঠক সংগঠন হিসেবে প্রথম আলো প্রকাশের আগেই গড়ে ওঠা এ সংগঠন এখন দেশের সর্ববৃহৎ এবং সবচেয়ে তৎপর সামাজিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। সেবা, আত্মোন্নয়ন, সংস্কৃতির বিকাশ, মেধার চর্চা, আর্তমানবতার জন্য নিজেকে উৎসর্গ করার মতো এক অদম্য মানসিক গঠন ও সাংগঠনিক কাঠামো বন্ধুসভাকে করেছে অনন্য।

লেখালেখি, বিতর্ক, গবেষণা, খেলাধুলা, শুদ্ধ সংস্কৃতির চর্চা, নেতৃত্ব, শুদ্ধাচার থেকে শুরু করে সামাজিক বনায়ন, বৃক্ষরোপণ, দুর্যোগে সেবা, উৎসবে সহমর্মিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়া—এমন সব ক্ষেত্রেই বন্ধুসভার সদস্যরা সদর্পে, স্বমহিমায় বিকশিত হয়ে আলো ছড়িয়ে যাচ্ছেন নিরলস।

এই যেমন সম্প্রতি সিলেট, সুনামগঞ্জসহ হাওরাঞ্চলে প্রাণঘাতি বন্যায় সবার আগে বন্যার্তদের মধ্যে খাবার, পানি, ওষুধসহ প্রয়োজনীয় সামগ্রী নিয়ে ছুটে যান সিলেট বন্ধুসভার সদস্যরা। এরপর সারা দেশের বন্ধুরা নিজেদের স্বেচ্ছা অনুদানে প্রায় ১১ লাখ টাকার ত্রাণসহায়তা প্রদান করেন বন্যার্তদের মধ্যে।

এ বছরই ঈদুল ফিতরে সারা দেশের বন্ধুসভাগুলো সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের মধ্যে ৩ হাজার ৭৪৯টি নতুন জামা, ৩ হাজার ৯৭১টি পরিবারের মধ্যে ২৮ লাখ ১০ হাজার ১৭৪ টাকার খাদ্যসামগ্রী ও নগদ সহায়তা প্রদান করে।

‘পৃথিবী একটাই, আসুন গাছ লাগাই’  স্লোগান নিয়ে সারা দেশের বন্ধুরা প্রায় ৪০ হাজার গাছের চারা রোপণ করেছেন।

এ মাসেই ‘একটি করে ভালো কাজ’–এর অংশ হিসেবে মাত্র এক সপ্তাহের মধ্যে ৭৯টি বন্ধুসভা সম্পূর্ণ নিজেদের অর্থায়নে দরিদ্রদের দোকান, ছাগল, রিকশা, ভ্যান কিনে দেওয়াসহ কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দেয়। ডেঙ্গুর বিরুদ্ধে সচেতনতা কর্যক্রম চালায়, পরিচ্ছন্নতাকর্মী, আদিবাসী জনগোষ্ঠী, সুবিধাবঞ্চিত নারীদের নিয়ে স্বাস্থ্যসচেতনতা অনুষ্ঠান, সুরক্ষা ও শিক্ষাসামগ্রী বিতরণ, বিশেষ সম্মাননা প্রদান করে। গ্রন্থাগার ও বই পরিষ্কার, অন্ধদের মধ্যে সাদাছড়ি বিতরণ, সাঁকো বানিয়ে দেওয়া, হাজার তালগাছের চারা রোপণ—এমন সব অসাধারণ কাজে নিজেদের উজাড় করে কাজ করেন বন্ধুসভার বন্ধুরা।

শুধু কি তাই! আত্মোন্নয়নে সাইবার নিরাপত্তা, নেতৃত্ব, উপস্থাপনা, শুদ্ধ উচ্চারণ, বিতর্ক, ফ্রিল্যান্সিং প্রশিক্ষণসহ নিজেদের আগামীর পৃথিবীর জন্য প্রস্তুত করতে একান্ত প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছেন বন্ধুরা।

দেশব্যাপী পাঠচক্র, লেখালেখি, গবেষণা আর গান-কবিতা-নাচের চর্চায় শুদ্ধ সংস্কৃতির বিকাশে কাজ করে বন্ধুসভা। প্রতিটি জাতীয় ও বিশেষ দিবস ঘটা করে পালন করে তরুণদের জাতীয় ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির  প্রতি তারুণ্যের নিবেদনে উদ্বুদ্ধ করে বন্ধুসভা।

এভাবেই ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় সংহতি, উৎকর্ষ আর মূল্যবোধ গঠনে সরবে কিন্তু নীরবেই এক সাংস্কৃতিক, সামাজিক বিপ্লবের অগ্রপথিক বন্ধুসভা আজ দুই যুগে। এমন মাহেদ্রক্ষণে সারা দেশের লক্ষাধিক বর্তমান এবং আরও অসংখ্য পুরোনো বন্ধুর আত্মনিবেদন সশ্রদ্ধচিত্তে স্মরণ করার বিশেষ দিন ১১ নভেম্বর।

বন্ধুসভা জাতীয় পরিচালনা পর্ষদ অনাড়ম্বরভাবে শুক্রবার দুই যুগপূর্তি উদ্যাপন করে। প্রথম আলো কার্যালয়ের সভাকক্ষে শতাধিক নতুন-পুরোনো বন্ধুদের নিয়ে কেক কেটে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদ্যাপন করেছে বন্ধুসভা। আবেগাপ্লুত বন্ধুরা নানা স্মৃতিচারণায় বর্ণিল করে তোলেন এ আয়োজন। যে দেশে বন্ধুসভা আছে, সেখানকার মানুষ পরাজিত হতে পারে না বলে মন্তব্য করেন কবি ও কথাসাহিত্যিক আনিসুল হক। এ ছাড়া প্রথম আলোর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সারা দেশের বন্ধুসভার বন্ধুদের একটি করে ভালো কাজের প্রশংসা করেন তিনি।

বন্ধুসভার ডাকে সাড়া দিয়ে উপস্থিত হন মনোরোগবিশেষজ্ঞ ডা. আহমদ হেলাল। তিনি বলেন, ‘বন্ধুদের কাছ থেকে চার্জ নিতে আসি। নতুন করে শতভাগ চার্জ নিয়ে আবার কাজে নেমে পড়ি। বন্ধুদের সঙ্গে থাকলে উজ্জীবিত হই।’। বন্ধুসভার সভাপতি উত্তম রয়, নির্বাহী সভাপতি মৌসুমী মৌসহ উপদেষ্টামণ্ডলী এবং বন্ধুরা আবারও প্রত্যয়দীপ্ত শপথ নেন, আগামীর বাংলাদেশ হবে তারুণ্যের, উজ্জীবিত তারুণ্যই গড়বে সোনার বাংলা। বন্ধুসভার হাত ধরেই গড়ে উঠবে বৈষম্যহীন, সুশৃঙ্খল, সুশিক্ষিত, যুক্তিবাদী, মানবসেবায় নিবেদিত এক ও অনন্য এক জাতিসত্তা, যার আকড় হবে বাংলাদেশ। বন্ধুসভাই হবে আগামীর বাংলাদেশের সবচেয়ে উজ্জ্বল ও অহংকারের প্রতিচ্ছবি।