বন্ধু কী খবর বল

খাতার ওপর আকাশ ঢেলে দিই। গলতে থাকে মেঘগুলো শব্দবৃষ্টি হয়ে। তবু সাদা পৃষ্ঠা পড়ে থাকে, শব্দ দিয়ে ভরাট করা হয় না। সাদা কাগজের পৃষ্ঠাও চায় শব্দরা সাজুক তার বুকজুড়ে। কিন্তু হয় না, কাউকে কিছু লেখা হয় না, বলা হয় না আমাদের গল্পগুলো, আমাদের প্রাণবন্ত বন্ধুদের দিনগুলোর কথা। রবিঠাকুর লিখেছেন, ‘গেলেম কে কোথায়?’ এই যান্ত্রিক জীবনে মাঝেমধ্যেই ভাবি, কোথায় গেল সেই দিনগুলো? সেই সোনালি ডানার দিন, রঙিন দিন। সেই বন্ধুগুলো, যারা দূরে থেকেও থাকত খুব কাছে। সময় নিয়ে এসেছে কতদূরে আমাদের। দিন থেকে দিন আমরা আরও কঠিনতম জীবনযাপনে ডুবছি তবু কি ভোলা যায় সেসব বন্ধুর কথা, বন্ধুত্বের কথা।
আজকের অরণ্য রণি বা আল হাদী—ওরা কি জানে, এই বন্ধুসভা শব্দটির গভীরতা। জানে কি, কী ভালোবাসা আর আবেগ জড়িয়ে আছে, জড়িয়ে থাকে এই শব্দে। এমসি কলেজ বন্ধুসভার সজল ছত্রী—এখন সাংবাদিক। কথা হয়েছে অনেক, দেখা হয়নি কখনো, তবু বন্ধুত্বের যে জায়গা দখল করে নিয়েছেন, সেটা তো থাকবেই। তখন বন্ধুসভার পৃষ্ঠা বের হতো বুধবার, আমার লেখা ছাপা হলে ঘুম থেকে উঠে দেখতাম ফোনে খুদে বার্তা বন্ধুদের, প্রসংশা করে। বুধবারটা ছিল আমার কাছে বন্ধুসভার। নিজ শহরের সুনীল শৈশব বলেন কিংবা ঝুমুর রায়, একই শহরের হলেও পরিচয় বন্ধুসভা দিয়েই। আমি প্রথম যেবার বন্ধুসভার কমিটিতে সাহিত্য সম্পাদক হয়ে স্থান পাই, সুনীল শৈশব সেবার সাধারণ সম্পাদক। এখনো অনেক কথা হয় সেই সময় নিয়ে দাদার সঙ্গে দেখা হলে। চিঠি আসত স্থানীয় একটি সাপ্তাহিক পত্রিকা মনুবার্তার ঠিকানায়, বন্ধুসভার বন্ধুরা দিতেন সেই চিঠি। আহা, এখন¯স্বপ্নের মতো মনে হয়,¯স্বপ্নের চেয়েও সুন্দর ছিল।
সারা দেশে কত জায়গায় গেছি, দেখা হয়েছে কত বন্ধুর সঙ্গে। সেই পরিচয়, আজও জীবন্ত। টাঙ্গাইলের তানিয়া আপু, জিনিয়া আপু, শুরু থেকেই বন্ধুসভার সঙ্গে আছেন। এখন যেন মনে হয় আমার আত্মজ তারা। এরপর কবিতা লিখত বন্ধুসভার পাতায় উর্মি খান, আপনি থেকে তুমিতে এসেছিল সম্পর্ক, উর্মি যে কোথায় হারাল! অনুজ শিশির, তাজ; টাঙ্গাইল বন্ধুসভার, নাম মনে করতে না পারা আরও কোনো বন্ধু হঠাৎ ফেসবুকে মেজেস দেন, চিনতে পেরেছেন, আমি ওমুক বন্ধুসভার? তখন স্মৃতিতে ডুবতে বাধ্য হই। বি.বাড়িয়ার ইমন, এখন প্রথম আলোতেই আছে। সিলেটের মিথুনও তাই, সিলেটের আরেক বন্ধু গৌতম নাকি র্যাবে আছে, বলেছিল মিথুন! নতুন বন্ধুদের জন্য আমাদের বন্ধুত্বের দিনগুলোর কথা লিখো তোমরা কখনো সময় করে। জানুক বন্ধুরা, তাদের মধ্যেও তৈরি হোক ভালোবাসার, বন্ধুত্বের বন্ধন।
এক লেখায় তো শেষ হবে না, তাই লিখতে হবে আরও। সারা দেশে বন্ধুসভার মাধ্যমে সৃষ্টি হওয়া আরও বন্ধুদের কথা। আমি লিখব, অন্য বন্ধুরাও লিখুক। জয়পুরহাটের সুমন, পিন্টু, সজীব। হিলি বন্দর থেকে ২০০ ফুট দূরেই পিন্টুদের বাড়ি, পিন্টুর মায়ের হাতের বানানো আচার, মনে পড়ে আজও, আজ আট বছর পরেও মনে পড়ে সজীব হঠাৎ ফোন করে। সংসার সাজিয়েছে, চাকরি করছে, আছে ভালো। পিন্টু বা সুমন কেমন আছে? মিস করি বন্ধু। শেষ দেখা হয়েছিল কোনো এক বন্ধু সম্মেলনে। আরও এক সজীব, নারায়ণঞ্জ বন্ধুসভার ছিল, বছর ১২ কিংবা ১৩ আগে এসেছিল নারায়ণগঞ্জ বন্ধুসভা শ্রীমঙ্গলে আনন্দভ্রমণে। সেবারই তার সঙ্গে পরিচয়। এখনো বেঁচে আছে আমাদের বন্ধুত্ব। বন্ধুত্বের গান।
শান্তা তাওহিদা, আমার বন্ধু। একদিন টিএসসির ঘাসে বসে বসে কথার ছলে সে জানালো, সে–ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধুসভার বন্ধু, টুকটাক লিখত নকশার পাতায়। তারও অনেক বছর চলে যাওয়ার পর পড়ালেখা শেষ করে শান্তা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েরই শিক্ষক হয়ে গেল। সারা দেশে বন্ধুসভার লাখ লাখ বন্ধু আছে, যেকোনো শহরের যেকোনো গলি বন্ধুসভার বন্ধুদের কলরবে মুখর হয়েছে, আজও কি হয়? সারা জীবন এই কলরবটি হোক, নতুন বন্ধুরা। বেঁচে থাকুক আমাদের বন্ধুত্ব। আমাদের ভালোবাসার জায়গা। আমাদের প্রাণের সংগঠন থেকে পাওয়া অমূল্য সম্পর্ক। বন্ধুত্ব সবুজ, বন্ধুত্বের বয়েস বাড়ে না। লিখব আরও বন্ধুদের কথা, ধীরে ধীরে।
সাবেক সভাপতি, উপদেষ্টা মৌলভীবাজার বন্ধুসভা।